‘আমাদের রিয়াদ অনেক বড় অফিসার হতে চেয়েছিল’

মো. রিয়াদ
ছবি: সংগৃহীত

বাড়ির আঙিনায় চেয়ারে বসে ছিলেন মাহবুর রহমান। তাঁর চারপাশে থাকা আত্মীয়স্বজনেরা তাঁকে সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন। কিন্তু মাহবুরের বিলাপ থামছে না। তিনি ছেলের ইচ্ছার কথা বলে চলছিলেন, ‘আব্বু, আরেকটু ধৈর্য ধর। আমি লেখাপড়া শেষ করে চাকরি করব। তোমরা কোনো টেনশন করো না। আমি অনেক বড় চাকরি করব। তোমার মতো ছোট চাকরি করব না। এমন চাকরি করব, অফিসের সবাই আমাকে স্যার বলবে।’

ছেলের মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে আহাজারি আর থামছে না মো. রিয়াদ মা–বাবার। রিয়াদের লাশের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন তাঁরা।

আজ শনিবার সকালে রিয়াদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার পশ্চিম নারায়ণপুর গ্রামে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। ঢাকার মিরপুরের প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী ছিলেন রিয়াদ (২২)। তিনি গাজীপুরের শিমুলতলী এলাকায় একটি মেসে ভাড়া থাকতেন। সেখানে তিনি একটি কোচিং সেন্টারে কোচিং করতেন।

নিখোঁজের চার দিন পর গতকাল শুক্রবার বিকেলে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের রতনপুর ধোপাচালা এলাকার বনের ভেতরের একটি ফাঁকা জায়গা থেকে রিয়াদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণে গতকাল ‘নিখোঁজের চার দিন পর কালিয়াকৈরে বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রের লাশ উদ্ধার’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

নিহত রিয়াদের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ফুলবাড়ি উপজেলার পশ্চিম নারায়ণপুরে। রিয়াদের মায়ের আহাজারি থামছে না। শনিবার সকালে
ছবি: প্রথম আলো

মাহবুর রহমান বলেন, দুই সপ্তাহ আগে রিয়াদ বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। ৭ জুন রিয়াদ গাজীপুরে ফিরে যান। ১৩ জুন সন্ধ্যায় মুঠোফোনে রিয়াদের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়। তিনি বাড়ির সবার ভালোমন্দ খোঁজখবর নিয়েছেন। তবে সে সময় জানা হয়নি, রিয়াদ কোথায় ছিলেন। নিখোঁজের পরের দিন মেসের বুয়া ফোন করে তাঁকে (মাহবুর) বলেছিলেন, ১৩ জুন থেকে রিয়াদ মেসে নেই।

রিয়াদের মা রোজিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিখোঁজের দিন আমার ময়না (রিয়াদ) আমার খাওয়ার খোঁজ নিছে। চার দিন হয়ে গেল আমার ছেলে মা ডাক দ্যাছে না। যে শত্রু এই কাম (খুন) করিছে, তাঁর ফাঁসি চাই।’

পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রিয়াদের গ্রামের দূরসম্পর্কের চাচা নাইস (৩৫) গাজীপুরের কালিয়াকৈরে একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। তাঁর সঙ্গে রিয়াদের দ্বন্দ্ব ছিল। এ বিষয়ে পারিবারিকভাবে দুই পক্ষের বৈঠকের পর সমঝোতা হয়। ১৩ জুন বিকেলে নাইস তাঁর নিজের জন্য নতুন একটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য মুঠোফোনে কল দিয়ে রিয়াদকে মেস থেকে ডেকে নেন। এর পর থেকে রিয়াদ নিখোঁজ।

আরও পড়ুন

রিয়াদের বাবা বলেন, রিয়াদ সিরাজগঞ্জ পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা পাস করেন। এরপর ২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ঢাকার মিরপুরে প্রাইম ইউনিভার্সিটিতে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হন।

গাজীপুরে অবস্থানরত রিয়াদের চাচা মাহফুজুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, রিয়াদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের মর্গে রয়েছে। ময়নাতদন্তের কাজ শেষ হলে রিয়াদের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হবে।