৪০৭ কোটি টাকা বেশি ব্যয়, আজ চালু হচ্ছে বহির্বিভাগ

নির্বাচনের আগে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু করার তোড়জোড় চলছে। সীমিত পরিসরে চালু হচ্ছে হাসপাতালের বহির্বিভাগ সেবা।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। গত রোববার তোলা
ছবি: প্রথম আলো

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল প্রকল্পের কাজ এক যুগেও শেষ হয়নি। তিন দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পর প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪০৭ কোটি টাকা। এরই মধ্যে আজ মঙ্গলবার নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের একটি ব্লকে বহির্বিভাগ চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও এখনই পুরোপুরি চালু হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও সম্মেলনের মাধ্যমে আজ কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।

গণপূর্ত কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর মৌজায় ২০ একর জমিতে প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হয়। বিভিন্ন সময়ে ৫৩টি প্যাকেজে ৫২ জন ঠিকাদার কাজটি করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। তখন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। নির্মাণের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬১১ কোটি টাকা। কিন্তু এ সময়েও কাজ শেষ করতে পারেননি ঠিকাদারেরা। দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। এবার ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৬৮২ কোটি টাকা, যা প্রথমে ধরা ব্যয় থেকে ৪০৭ কোটি টাকা বেশি। ওই মেয়াদেও কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয়বারের মতো চলতি বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রথম দিকে পরিকল্পনায় কিছু ঘাটতি ছিল। পরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে সবকিছু কাটিয়ে কাজ শেষ করা হচ্ছে। প্রকল্পের ৮৮ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে শতভাগ কাজ শেষ হয়ে যাবে।

২০১১ সালে কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটসে অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। গত বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। সেখানে ছয়তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দুই তলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদসহ আরও কিছু ভবন হস্তান্তর করা হয়েছে। বর্তমানে কলেজে অনানুষ্ঠানিকভাবে সবকিছু চলছে। এরই মধ্যে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণে ধীরগতি চলতে থাকে। নির্মাণাধীন সাততলা ভবনে ৫০০ শয্যার পাশাপাশি ৮৮টি কেবিন, ২৩ শয্যার সিসিইউ, ২০ শয্যার আইসিইউ সেবা থাকছে। এ ছাড়া জরুরি সেবা দিতে আলাদা আরও ১৩০ শয্যার ব্যবস্থা থাকছে। কলেজ ও হাসপাতাল মিলে থাকছে ২১টি বড় লিফট।

এদিকে হাসপাতালের জন্য গত অর্থবছরের জুনে অন্তত ৯০ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও আসবাব কেনা হয়, যা নির্মাণাধীন ভবনের ভেতর পড়ে রয়েছে। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে আছে অত্যাধুনিক এমআরআই মেশিন, সিটিস্ক্যান, এক্স-রে মেশিন, আলট্রাসনোগ্রাম মেশিন এবং অস্ত্রোপচারকক্ষে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি।

প্রকল্প পরিচালক সরওয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, দামি দামি যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরে প্যাকেটবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে। যথাসময়ে চালু করতে না পারলে ধুলাবালুতে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তিনি বলেন, বহির্বিভাগ সেবা চালু হলেও কোনো ডায়াগনসিস করানো হবে না। যন্ত্রপাতি ব্যবহারের বিষয়ে হাসপাতালের পরিচালক এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তিনি চাহিদা না দিলে এসব যন্ত্রপাতি হস্তান্তর করা হয় না।

সময়মতো প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় বেশ কয়েকবার পরিদর্শনে গিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য মাহবুব উল আলম হানিফ। নির্বাচনের আগেই হাসপাতালটি চালুর বিষয়ে তাঁর কড়া নির্দেশনা ছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতালের সাততলা ভবনের নিচতলার ছয়টি ব্লকের মধ্যে ডানে সি ব্লকে অন্তত ৩০টি কক্ষে বহির্বিভাগ সেবা চালুর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের অস্থায়ী ক্যাম্পাস কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে সংযুক্ত থাকা অন্তত ২৭ জন কর্মচারীকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মারুফ হাসান বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে বহির্বিভাগ সেবা চালু করা হচ্ছে। সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সপ্তাহে ৬ দিন ২২ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দেবেন। প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করা হবে। তবে ভবন পূর্ণাঙ্গভাবে বুঝে না পাওয়া ও জনবল–সংকটের কারণে প্যাথলজিসহ ডায়াগনসিস সেবা আপাতত হচ্ছে না এবং রোগী ভর্তি করা হবে না।