প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে আরজি জানালেন কাঙালিনী সুফিয়া

বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও সদা হাস্যোজ্জ্বল লোকসংগীতশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কুষ্টিয়া পৌর মেয়রের কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আল

আলাপের একফাঁকে হো হো করে হেসে উঠলেন। প্রায় সব দাঁত পড়ে গেছে। মাত্র একটি দাঁত বের হলো! তবু হাসি থামে না তাঁর। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীর নিয়ে হেসে বললেন, ‘বয়স হলিও তবুও গান গাইতি পারি, ইনশা আল্লাহ। যদি কুনুখানে ফাংশন হয়, এহনো এই শরীর নিই মঞ্চে ১০-১২ খান গান গায়ি নামতে পারি। এই বল আমি সব সময় রাখি।’

মনে শক্তি নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন লোকসংগীতশিল্পী কাঙালিনী সুফিয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে কুষ্টিয়া পৌরসভা মেয়রের কার্যালয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তিনি তাঁর মনের কথা শোনালেন। জানালেন কিছু আরজি। বললেন, ‘সবাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে একুশে পদক পেয়েছে। আমি কাঙালিনী সুফিয়া এহনো পর্যন্ত আমার মার হাতে, শেখ হাসিনার হাতে আমি একুশে পদক পাবার আশা। সে যদি আমারে একুশে পদকটা দেয়, তাইলে আমি সারা জীবন তাঁর গুণগান গাব।’

আরও পড়ুন

মেয়রের কার্যালয়ে এ সময় ছিলেন প্যানেল মেয়র শাহিন উদ্দিন। তিনি ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বে রয়েছেন। শাহিন উদ্দিনের মাথায় হাত রেখে কাঙালিনী গেয়ে উঠলেন, ‘আমার সোনা পাখি রে, বলো তোমায় কোথায় রাখি রে...। ’

সোনা পাখি কে জানতে চাইলে কাঙালিনী আবারও হেসে বললেন, ‘এই যে আমার শাহিন। ওই তো আমার সোনা পাখি।’ এ সময় শাহিন উদ্দিন তাঁর হাতে কিছু টাকা দিলেন। তিনি সাদরে গ্রহণ করলেন।

শাহিন উদ্দিন জানালেন, কাঙালিনীর সঙ্গে বর্তমান মেয়র আনোয়ার আলীর অনেক দিনের পরিচয়। তিনি মাঝেমধ্যেই এখানে আসেন। পৌরসভার কোনো অনুষ্ঠান হলে আগে গান করতেন। মেয়র অসুস্থ থাকায় বর্তমানে কার্যালয়ে কম আসেন।

আরও পড়ুন

মেয়রের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কাঙালিনী সুফিয়া বললেন, ‘এই পৌরসভায় আমার একমাত্র দরদি মেয়র আনোয়ার আলী সাব। উনি মাঝে মাঝে আমার গানবাজনা ভালোবাসে। আমাক অনুষ্ঠান দিত। এই ভালোবাসার খাতিরে এহেনে আসি। আজকে সে অসুস্থ। আমিও অসুস্থ। কেম্বা করি যাব। তাঁর (মেয়র) মন শিল্পী মন।’

কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বে রয়েছেন প্যানেল মেয়র শাহিন উদ্দিন। তাঁর মাথায় হাত রেখে কাঙালিনী গেয়ে উঠলেন, ‘আমার সোনা পাখি রে, বলো তোমায় কোথায় রাখি রে... ’
ছবি: প্রথম আলো

একটা গান শোনার আগ্রহ দেখালেন কার্যালয়ে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি। কাঙালিনী বললেন, ‘আমি গান গাব। এখন গাব। আচ্ছা গাচ্ছি। আবারও হাসলেন। হাতে কাপড় জড়ানো একতারা উঁচু করে গেয়ে উঠলেন, ‘কত কষ্ট কইরা আমি ই...কামাই রোজগার করে আনি, তবু বুইড়ার মন পাইলাম নারে, বুড়ি হইলাম তোর কারণে, পরানের বান্ধব রে, বান্ধব বুড়ি হইলাম তোর কারণে।’

সবার প্রতি অনুরোধ রেখে কাঙালিনী বললেন, ‘আমি কাঙালিনী সুফিয়া যদি মারা যাই, তাইলে আপনারা সবাই আমাকে স্মরণ কইরেন।’

আরও পড়ুন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে দেশে একসময় সাড়া জাগানো এই লোকসংগীতশিল্পী বলেন, ‘রাজবাড়ীতে ২০ শতাংশ জায়গাতে জাদুঘর করে দিয়েছেন তিনি। এই কুষ্টিয়াতে ১৮ শতক জায়গা পেয়েছি। আগামী ঈদের পর সেটা বুঝিয়ে দেবার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক।’

বর্তমান রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার রামদিয়া গ্রামে জেলে পরিবারে কাঙালিনী সুফিয়ার জন্ম। তাঁর প্রকৃত নাম টুনি হালদার। ১৪ বছর বয়সেই গ্রামের অনুষ্ঠানে গান গেয়ে মানুষের নজর কাড়েন। একসময় তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনেরও নিয়মিত শিল্পী ছিলেন। তাঁর গানের গুরু গৌর মহন্ত ও দেবেন খ্যাপা। হালিম বয়াতির কাছেও গান শিখেছিলেন। এ পর্যন্ত ৩০টি জাতীয় ও ১০টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছেন। ‘কোনবা পথে নিতাইগঞ্জ যাই’, ‘বুড়ি হইলাম তোর কারণে’, ‘নারীর কাছে কেউ যায় না’, ‘আমার ভাটি গাঙের নাইয়া’সহ বেশ কিছু জনপ্রিয় গানের শিল্পী তিনি।

আরও পড়ুন