আশ্রয়শিবিরে মার্কিন উপসহকারী মন্ত্রী
নিরাপদ প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চাইলেন রোহিঙ্গা নেতারা
কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত আফরিন আক্তারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের মার্কিন প্রতিনিধিদল আশ্রয়শিবিরের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিদর্শন করে। এ সময় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আফরিন আক্তার।
রোহিঙ্গা নেতারা প্রতিনিধিদলের কাছে শরণার্থী জীবন, দাতা সংস্থার তহবিল কমে যাওয়া, আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তা, প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়াসহ রাখাইনে হওয়া গণহত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের বিবরণ তুলে ধরেন। নিরাপদ প্রত্যাবাসনে তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়েছেন।
আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় প্রতিনিধিদলের নিরাপত্তা দেন ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা। এ সময় প্রতিনিধিদলের সংবাদ সংগ্রহের জন্য সাংবাদিকদের আশ্রয়শিবিরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। বেলা আড়াইটার দিকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা আশ্রয়শিবির থেকে সড়কপথে কক্সবাজার শহরে ফিরে আসেন। বিকেল চারটার দিকে শহরের সৈকত এলাকায় শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের (আরআরআরসি) কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে প্রতিনিধিদল। বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের সর্বশেষ পরিস্থিতি, আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তাব্যবস্থাসহ নানা বিষয় তুলে ধরেন আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।
বৈঠক শেষে আফরিন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে তিনি কক্সবাজারে এসেছেন। মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ তৈরির পরই কেবল স্বেচ্ছায় প্রত্যাবাসন সম্ভব। জোরপূর্বক কিংবা বাধ্য করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চায় না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনের পক্ষে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, তিনি (শেখ হাসিনা) তা রক্ষা করবেন।
সন্ধ্যা ছয়টার দিকে উড়োজাহাজে কক্সবাজার ত্যাগ করে মার্কিন প্রতিনিধিদল। এর আগে গতকাল সোমবার ঢাকায় পৌঁছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আক্তার। আজ সকালে ঢাকা থেকে তাঁরা কক্সবাজারে আসেন।
আরআরআরসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মার্কিন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
আরআরআরসি কার্যালয় ও এপিবিএন সূত্র জানায়, সকাল সোয়া ১০টার দিকে কক্সবাজার থেকে সড়কপথে উখিয়ার মধুরছড়া (ক্যাম্প-৪) আশ্রয়শিবিরে পৌঁছে ইউএনএইচসিআরের নিবন্ধন সেন্টার ও কুতুপালং আশ্রয়শিবিরে ইউএনএফপিএর একটি সেন্টারে রোহিঙ্গা নারীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আফরিন আক্তার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক রোহিঙ্গা নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বৈঠকে দুজন রোহিঙ্গা নারী আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তাব্যবস্থার অবনতির কথা তুলে ধরেন। পাশাপাশি তাঁরা ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ, হত্যা-ধর্ষণসহ গণহত্যার বিবরণ তুলে ধরেন। আরেক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, গত ছয় বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেওয়া হয়নি। এখন চীনের মধ্যস্থতায় এক হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর তোড়জোড় চললেও তা নিয়ে রোহিঙ্গাদের মধ্যে শঙ্কা কাজ করছে।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিনিধিদলের সদস্যরা উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১১) ডব্লিউএফপির ই-ভাউচার কেন্দ্র, রোহিঙ্গা শিশুদের লার্নিং সেন্টার পরিদর্শন করেন। এ সময় কয়েকটি রোহিঙ্গা শিশুর সঙ্গে পাঠ্যক্রম নিয়ে কথা বলেন আফরিন আক্তার। বেলা দেড়টার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরের একটি সেন্টারে কয়েকজন রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় কয়েকজন রোহিঙ্গা নারী তাঁদের বর্তমান সমস্যার কথা তাঁর কাছে তুলে ধরেন। বেলা আড়াইটার দিকে বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮) জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর ও আইওএমের এলপি গ্যাস সিলিন্ডার কার্যক্রম ও পর্যবেক্ষণকেন্দ্র (ওয়াচ টাওয়ার) পরিদর্শন করে কক্সবাজারে রওনা দেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে আট লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।