সময়ের মুখ

মনোনয়নের সময় ২০ টাকা করে চাঁদা তুলে দিয়েছেন চা-শ্রমিকেরা

খায়রুন আক্তার (২৬) চা-শ্রমিক। কাজ করেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা-বাগানে। গত বুধবার অনুষ্ঠিত চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচনে চুনারুঘাট উপজেলা পরিষদের সংরক্ষিত নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন তিনি। খায়রুন ভোট পান ৭৬ হাজার ২৮১টি। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী পান ১২ হাজার ২১ ভোট। এই চা-কন্যার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাফিজুর রহমান। 

প্রথম আলো:

বিপুল ভোটে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলেন। কেমন লাগছে? 

খায়রুন আক্তার: এটা কল্পনার বাইরে ছিল। খুবই ভালো লাগছে। 

আরও পড়ুন
প্রথম আলো:

নির্বাচনে অংশ নিলেন কী মনে করে? 

খায়রুন আক্তার: এই বাগান দিনে ১৭০ টাকা মজুরিতে চা-শ্রমিকেরা কাজ করেন। তাঁরা কখনো কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নেন না। আমি নিয়েছি। ভাবলাম, আমি শ্রমিক সংগঠন করি। অংশ নিয়ে মানুষকে পথ দেখাই। 

প্রথম আলো:

বিপুল ভোটে জয়ী হওয়ার কারণ কী? 

খায়রুন আক্তার: আমি যাঁদের কাছে গিয়েছি, তাঁরা নিজের পরিবারের সদস্য ভেবে ভালোবেসে ভোট দিয়েছেন। 

প্রথম আলো:

চা-শ্রমিকের পেশা বেছে নিয়েছিলেন কেন? 

খায়রুন আক্তার: আমার বাবাও চা-শ্রমিক ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর সংসার চালানোর কেউ ছিল না। অভাবের কারণেই চা-বাগানে কাজ শুরু করি। চা-বাগানে কাজ করা নিয়ে অনেক কটূক্তি শুনতে হয়েছে। 

প্রথম আলো:

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা করতে পেরেছেন? 

খায়রুন আক্তার: দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছি। 

প্রথম আলো:

পরিবারে কে কে আছেন? 

খায়রুন আক্তার: মায়ের সঙ্গে চান্দপুর চা-বাগানে বাস করি। আমরা তিন বোন ও এক ভাই। বোনদের বিয়ে হয়েছে। 

প্রথম আলো:

ভোটে জেতার পর প্রতিবেশীরা কী বলেছেন? 

খায়রুন আক্তার: প্রতিবেশীরা আমাকে ভীষণ ভালোবাসেন। ভোটে জেতার কথা শুনে তাঁরাও আনন্দিত। প্রতিদিনই বিভিন্ন জায়গা থেকে আমাদের বাড়িতে লোকজন আসছেন। 

প্রথম আলো:

ভোট করতে টাকা লাগেনি? 

খায়রুন আক্তার: বেশ কিছু টাকা খরচ হয়েছে। 

প্রথম আলো:

পেলেন কোথায়? নিজের কাছে ছিল? 

খায়রুন আক্তার: আমার মা হাঁস-মুরগি বিক্রি ও নানাভাবে জোগাড় করে ১০ হাজার টাকা দিয়েছেন। একটি এনজিও (ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা) থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণও নিয়েছি। মনোনয়নের সময় ২০ টাকা করে চাঁদা তুলে দিয়েছেন চা-শ্রমিকেরা।

প্রথম আলো:

জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় এখন কি আর চা-বাগানে চাকরি করবেন? 

খায়রুন আক্তার: চাকরি যেহেতু আছে, সেহেতু কাজ আমাকে করতে হবে। 

প্রথম আলো:

আপনাকে তো ‘চা-কন্যা’, ‘অগ্নিকন্যা’ ও ‘স্লোগানকন্যা’ হিসেবে অনেকে চেনেন। কেন? 

খায়রুন আক্তার: চা-শ্রমিকদের নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলনে আমি থাকি, স্লোগান দিই, ভাষণ দিই। তাই হয়তো এসব নামে ডাকে। 

প্রথম আলো:

জনপ্রতিনিধি হয়ে মানুষের জন্য কী করবেন? 

খায়রুন আক্তার: আমি এলাকার নারীদের নিয়ে কাজ করতে চাই। তাঁদের মতামত নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব।