বাঁশখালীর তিন কেন্দ্রে দুই ঘণ্টায় ভোট পড়েছে ৮ থেকে ১৭%

চট্টগ্রাম ১৬ আসনের বাঁশখালীর বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের একটি ভোটকক্ষে ঈগল প্রতীকের দুজন এজেন্টকে বসে থাকতে দেখা যায়। আজ সকালেছবি সুজন ঘোষ

প্রতিটি ভোটকক্ষে (বুথ) প্রত্যেক প্রার্থীর একজন করে পোলিং এজেন্ট থাকতে পারেন। কিন্তু চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে একটি কেন্দ্রে এক প্রার্থীর দুজন প্রতিনিধিকে অবস্থান করতে দেখা যায়। উপজেলা সদরের বাঁশখালী আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ৩ নম্বর বুথে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের দুজন পোলিং এজেন্ট ছিলেন।

তাঁরা হলেন মো. ইলিয়াস ও আলী হায়দার। আজ রোববার ভোট গ্রহণ শুরুর ১৫ মিনিট পর সকাল সোয়া আটটায় তাঁদের দুজনকে ঈগল প্রতীকের ব্যাচ পরা অবস্থায় বুথে বসে থাকতে দেখা যায়। তবে গণমাধ্যমকর্মীরা কেন্দ্রে গেলে আলী হায়দার সরে যান। তবে তিনি বলেন, দুজন থাকতে কোনো অসুবিধা নেই।

অবশ্য সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সবিতা দাশ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, একটি বুথে এক প্রার্থীর দুজন পোলিং এজেন্ট থাকার সুযোগ নেই। তাই একজনকে বের করে দিয়েছেন তিনি।

সকালে এই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটারদের উপস্থিতি ছিল একেবারে কম। ৮টি বুথে এক-দুজন করে ভোটার হাজির হয়েছিলেন সকালে। তবে কেন্দ্রের মাঠে নৌকা, ঈগল ও ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীদের ব্যাচধারীদের জটলা দেখা যায়।

এ সময় নৌকা প্রতীকের স্টিকার লাগানো গাড়িতে করে ভোটারদের কেন্দ্রে আনা-নেওয়া করতে দেখা যায়। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার ৩ হাজার ৭৩৬ জন। সকাল ১০টা পর্যন্ত প্রথম ২ ঘণ্টায় ভোট দিয়েছেন ৪৯৯ জন, যা মোট ভোটারের ১৩ শতাংশ।

এদিকে বাঁশখালী পৌরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডের জলদী কেয়াং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম ২ ঘণ্টায় ৪৬৭ জন ভোট দিয়েছেন, যা মোট ভোটারের ১৭ শতাংশ। এই কেন্দ্রে মোট ভোটার রয়েছে ২ হাজার ৭৯৭ জন।

আজ সকাল পৌনে নয়টায় এই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের সারি। আর বাইরে তিন প্রার্থীর সমর্থকদের জটলা। বাইরে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়।

তবে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হচ্ছে বলে জানান প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মো. জহিরুল হক।
এদিকে উপজেলার জলদী ভাদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩ হাজার ৪৮৬ জনের মধ্যে প্রথম ২ ঘণ্টায় ভোট দিয়েছেন ২৯১ জন। ভোট গ্রহণের হার ৮ শতাংশ।

এই কেন্দ্রেও বাইরে নৌকা ও ঈগল প্রতীকের ব্যাচধারীদের অবস্থান করতে দেখা যায়। তবে কেন্দ্রের ভেতরের ভোটার উপস্থিতি ছিল কম।

তানভীর হাসান নামের এক ভোটার বলেন, এলাকার উন্নয়ন নিয়ে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। গত ১০ বছরে এখানে তেমন কোনো উন্নয়নকাজ হয়নি। রাস্তাঘাট সংস্কার করা হয়নি। এ কারণে মানুষ ক্ষুব্ধ।

চট্টগ্রামের এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি গত দুবারের (২০১৪ ও ২০১৮) সংসদ সদস্য। কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে ‘অশালীন’ মন্তব্য, প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিলসহ নানা কারণে তিনি সমালোচিত হয়েছেন। এবার নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন ও সাংবাদিককে মারধরের ঘটনায় মামলা করেছে নির্বাচন কমিশন। সর্বশেষ বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমেদকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন।

গত দুবার প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকলেও এবার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন ঈগল প্রতীকের মুজিবুর রহমান ও ট্রাক প্রতীকের আবদুল্লাহ কবির। এর মধ্যে মুজিবুর চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আবদুল্লাহ কবির দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে এই আসন। ভোটার রয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার ৭৭৮ জন।

স্বাধীনতা-পরবর্তী ১১টি নির্বাচনে এই আসনে চারবার (২০১৪ ও ২০১৮ সহ) আওয়ামী লীগ, পাঁচবার বিএনপি ও দুবার জাতীয় পার্টি জয়ী হয়।

এই আসনে মোট প্রার্থী রয়েছেন ১০ জন। বাকি সাতজন হলেন ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের আবদুল মালেক (চেয়ার), বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) আশীষ কুমার শীল (কুঁড়েঘর), বাংলাদেশ কংগ্রেসের এম জিল্লুল করিম শরীফ (ডাব), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মামুন আবছার চৌধুরী (আম), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মহিউল আলম চৌধুরী (মোমবাতি), ইসলামী ঐক্যজোটের শফকত হোসাইন চাটগামী (মিনার) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. খালেকুজ্জামান (বেঞ্চ)।