জন্মের ৪০ ঘণ্টা পর মায়ের কোলে দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়া

মা কল্পনা খাতুনের কোলে চার সন্তান। আজ বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গার একটি বেসরকারি হাসপাতালে
ছবি: প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গায় একসঙ্গে জন্ম নেওয়া চার নবজাতক দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়া সুস্থ আছেন। জন্মের ৪০ ঘণ্টা পর আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তাদের প্রথমবারের মতো একসঙ্গে দেখা গেছে মা কল্পনা খাতুনের কোলে।

কল্পনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার জুড়ানপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের মাহবুল হোসেনের স্ত্রী। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে একে একে চারটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন কল্পনা। গতকাল বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান চার নবজাতককে দেখতে যান। এ সময় তিনি চার নবজাতকের নাম দেন দোয়েল, কোয়েল, ময়না ও টিয়া।

আরও পড়ুন

চুয়াডাঙ্গা শহরের আঁখিতারা জেনারেল হাসপাতালের তিনতলার একটি কেবিনে চার সন্তানকে নিয়ে চিকিৎসাধীন কল্পনা খাতুন। আজ সকালে সেখানে গিয়ে মায়ের কোলে চার শিশুসন্তানকে দেখা যায়। এ সময় পাশে বসে ছিলেন বাবা মাহবুল হোসেন। মেঝেতে মাদুরের ওপর বসে ছিলেন চার শিশুকন্যার নানি হাজেরা বেগম, মামি আমিনা খাতুন ও দাদি সাহারন নেছা। সবার আলোচনার বিষয় ছিল চার নবজাতককে ঘিরে।

চার সন্তানকে একসঙ্গে প্রথম কোলে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে কল্পনা খাতুন বলেন, অস্ত্রোপচারের সময় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে দীর্ঘ সময় অসুস্থ ছিলেন। অসুস্থতার মধ্যেও একে একে চার সন্তানকে ছুঁয়ে দেখেছেন। তবে আজ সকাল ১০টার দিকে চারজনকে প্রথম একসঙ্গে কোলে নেন।

কল্পনা বলেন, ‘আমাগের ১০ বচরের অ্যাট্টা ছেলে আচে। আমি আর বাড়িআলা (স্বামী) দুজনই আল্লাহর কাছে চাইয়েলাম এবেড্ডা য্যানো আমাগের মেয়েসুন্তান দেয়। আমাগের চাওয়াডা আল্লা কবুল করেচে। আল্লা খুশি হয়ে আমাগের ঘরে চারডে মেয়ে পাটিয়েচে। যাতে আল্লা খুশি, তাতে আমরাও খুশি।’

চার কন্যার বাবা মাহবুল হোসেন বলেন, সন্তানেরা গর্ভে থাকাকালীন অন্তত ছয়বার আলট্রাসনোসহ প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নীরিক্ষা করা হয়েছে। প্রতিবারই বলা হয়েছিল তিনটি কন্যাসন্তান হবে। বাড়ির সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত চারটি কন্যাসন্তান হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুল বলেন, ‘একসাতে জুমকা (যমজ) চারটে মেয়ে হওয়ার খবরে অনেকেই দেকতি আসে। আবার যাগের সন্তান নেই, অ্যারাম অনেকেই বলে যে তাঁদের দিয়ে দিতি। আমি আর বউ সিদ্দান্ত নিইচি, চার মেয়েকেই আমাগের কাচেই রাইখপো। আল্লা চালি এই মেয়েরাই একদিন সুংসারে সুক আইনে দেবে।’

হাসপাতালের গাইনি কনসালটেন্ট আকলিমা খাতুন আজ সকালে প্রথম আলোকে বলেন, দোয়েল, কোয়েল, ময়না, টিয়া এবং তাদের মা কল্পনা খাতুন বর্তমানে সুস্থ আছেন। কল্পনা খাতুনের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা থাকায় মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করা হয়। অস্ত্রোপচারকালে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে তিন ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। অবস্থা স্বাভাবিক থাকলে শুক্রবার তাঁদের ছাড়পত্র দেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান আজ প্রথম আলোকে বলেন, দিনমজুর মাহবুল হোসেনের পরিবারে চার কন্যা জন্মলাভের বিষয়টি নানাভাবে আলোচিত হচ্ছে। চার শিশুসন্তানের কল্যাণে অনেকেই সহযোগিতা করতে আগ্রহ দেখিয়েছেন। এ ধরনের আগ্রহকে তাঁরা স্বাগত জানান।