বাপা নেতার সাক্ষাৎকার

ভুয়া কার্যাদেশ দেখিয়ে গাছ কেটে নেওয়ায় জড়িতদের শাস্তি হওয়া উচিত

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নিলাম দরপত্রের ভুয়া কার্যাদেশ দেখিয়ে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদী উপজেলার জয়শ্রী থেকে বাটাজোর ভায়া সানুহার পর্যন্ত দুই পাশের কোটি টাকার গাছ কেটে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয় এক প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতার প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া কার্যাদেশ বের করে গাছগুলো কেটে নেন গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য হাবুল ব্যাপারী। এ পর্যন্ত ১৫০টি গাছ কেটে ১০০টি গাছ তিনি সরিয়ে ফেলেছেন। এ নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. রফিকুল আলমের সঙ্গে।

প্রশ্ন:

ভুয়া কার্যাদেশ তৈরি করে গাছ কেটে নেওয়ার বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

রফিকুল আলম: এটি মারাত্মক অপরাধ, দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রথমত, ওই ব্যক্তি ভুয়া কার্যাদেশ তৈরি করে রাষ্ট্র ও নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। দ্বিতীয়ত, তিনি পরিবেশের ক্ষতি করেছেন এবং বন আইনের লঙ্ঘন করেছেন। এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি এবং এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত। একই সঙ্গে এ ঘটনায় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ, সওজ—কেউই দায় এড়াতে পারে না।

প্রশ্ন:

বন ও পরিবেশ আইনে কী বলা হয়েছে?

রফিকুল আলম: আইন অনুযায়ী, যেকোনো গাছ কাটতে হলে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রচলিত আইন অনুযায়ী, গাছ কেটে সরকারের কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে অবস্থানগত ছাড়পত্র, পরিবেশগত প্রভাব সমীক্ষা (ইআইএ) এবং গাছ কাটার জন্য আলাদা অনুমোদন লাগে। ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গাছগুলো যেভাবে কেটে ফেলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তা দেশের পরিবেশ ও বনসংক্রান্ত একাধিক আইনের লঙ্ঘন। আর একটি পক্ষ এ সুযোগ নিয়েছে ভুয়া কার্যাদেশ তৈরি করার মধ্য দিয়ে। সরকারি সংস্থাগুলো এভাবে আইন ভাঙলে দেশের পরিবেশ কীভাবে রক্ষা পাবে? বনজ সম্পদ পরিবহন বিধিমালায় সরকারি বা ব্যক্তিগত মালিকানাধীন যেকোনো জমিতে কোনো গাছ থাকলেই সে তা নিজের ইচ্ছেমতো কাটতে পারে না। এ জন্য স্থানীয় বন বিভাগের কাছ থেকে ওই গাছ কাটা ও পরিবহনের অনুমতি নিতে হয়। বন বিভাগের অনুমোদন না নিলে অবশ্যই এটা নিয়মের ব্যত্যয়।

আরও পড়ুন
প্রশ্ন:

জীবন ও পরিবেশের জন্য গাছ কতটা অপরিহার্য বলে মনে করেন?

রফিকুল আলম: গাছ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে এবং পরিবেশ বাঁচায়। প্রয়োজনের তুলনায় গাছ যত কমবে, এমন সুবিধাও তত কমে আসবে। এতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় বাড়তে থাকবে এবং বিপর্যয়কালীন ক্ষয়ক্ষতি বাড়বে। একটি দেশের প্রাকৃতিক ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য মোট ভূখণ্ডের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশে এর পরিমাণ ১০ শতাংশের নিচে। এটা আমাদের জন্য অশনিসংকেত।

প্রশ্ন:

উন্নয়ন–পরিকল্পনায় পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

রফিকুল আলম: টেকসই উন্নয়নের স্বার্থে উন্নয়ন–পরিকল্পনায় পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। ধরিত্রী রক্ষায় সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব আছে। এই পৃথিবীকে শুধু আমাদের জন্য নয়; বরং পরবর্তী প্রজন্ম যেন সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারে, সে লক্ষ্যে সম্মিলিতভাবে কাজ করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।

নির্বিচারে গাছ কাটার কারণে উষ্ণতা বেড়ে আমাদের ঋতুগুলো চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠেছে। ক্রমাগত কংক্রিটের বিস্তারে শহরের স্বাভাবিক আবহাওয়া আর বজায় থাকছে না। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহের মুখোমুখি হচ্ছে দেশবাসী। এর কারণ হিসেবে প্রকৃতির সঙ্গে ভারসাম্য বজায় না রেখে অপরিকল্পিত উন্নয়ন, বন-বৃক্ষনিধনই দায়ী। প্রয়োজনীয় সংখ্যক বনভূমির অভাবে উষ্ণতা বেড়ে গেছে। সুপেয় পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে।

প্রশ্ন:

আমাদের তাহলে করণীয় কী?

রফিকুল আলম: উন্নত দেশগুলো উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে এখন। এ কারণে তারা গাড়ি চলাচলের সড়ক কমিয়ে হাঁটাচলার জন্য বৃক্ষশোভিত অঞ্চল তৈরি করছে। নেদারল্যান্ডস, জার্মানির সরকার সড়কের পাশাপাশি সেতু-কালভার্টও ভেঙে ফেলছে। ওই স্থানে পানিপ্রবাহ ও বৃক্ষ দিয়ে সাজাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় তারা এমন উদ্যোগ নিয়েছে।