নারায়ণগঞ্জের এসপি-ওসিসহ ৪২ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আবেদন রিজভীর
নারায়ণগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে গুলিতে যুবদল কর্মী শাওন প্রধানের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ সুপারসহ ৪২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে হত্যা মামলার আবেদন করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী। আজ রোববার সকালে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান হোসেনের আদালতে মামলার এ আবেদন করেন তিনি। আদালত মামলার আবেদন গ্রহণ করে পরে আদেশ দেবেন বলে জানিয়েছেন বাদীর আইনজীবী মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার।
মাসুদ আহম্মেদ তালুকদার বলেন, ‘আমরা আদালতকে বলেছি, যেহেতু আইন আপনাকে ক্ষমতা দিয়েছে, এটাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যাঁরা অপরাধী, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিন। আদালত আমাদের বলেছেন, তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যেটা আইনসম্মত হয়, সেই আদেশ দেবেন।’
মামলার আসামিরা হলেন ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) মাহফুজুর রহমান ওরফে কনক, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনিচুর রহমান, পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক-অঞ্চল) নাজমুল হাসান, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার এসআই কামরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) তরিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আমীর খসরু, কনস্টেবল শাহরুল আলম, মো. সোহাগ, আরিফ দেওয়ান, ফেরদৌস আক্তার, সেলিম, রিপন, মামুন, রিয়াজ, হাফিজ, ইকবাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, জাকির হোসেন, নাঈম, রাকিব, আনিছ, সাইদুল, সোহরাব, ইনজামুল, রাসেল, খলিলুর রহমান, মহসীন মিয়া, মোস্তাকিম, শাহাদাৎ হোসেন, ফখরুল ইসলাম, আরিফ দেওয়ান, দীপক সাহা, শাহীন, ফরিদ উদ্দিন, মুরাদুজ্জামান, শাহীন, কবির হোসেন, রুবেল, সোহাগ, মান্নান ও যুগল। এ ছাড়া জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১৫০ জন পুলিশ সদস্যকে মামলায় আসামি করা হয়েছে।
মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে বিএনপি নেতা-কর্মীরা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ শহরের দুই নম্বর রেলগেট এলাকার আলী আহাম্মদ চুনকা পাঠাগারের সামনে জড়ো হতে শুরু করেন। সমাবেশে আসার পথে সরকারি ইন্ধনে মামলার বিবাদীরা বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাধা দেন। একপর্যায়ে হাজার হাজার নেতা-কর্মী সমবেত হলে আসামিরা নিজেদের আইনগত দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা ভুলে গিয়ে হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোঁটা দিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মারতে শুরু করে। এরপর বিবাদীরা ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের ওপর গুলিবর্ষণ, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও রাবার বুলেট ব্যবহার করেন।
আবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ডিবির এসআই মাহফুজুর রহমান তাঁর হাতে থাকা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি করলে যুবদল কর্মী শাওন লুটিয়ে পড়েন। বিবাদীরা এলোপাতাড়ি গুলি, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়লে ছাত্রদল নেতা ফারুক আহম্মেদের বুক ঝাঁজরা হয়। তাঁর অবস্থায় এখনো আশঙ্কাজনক। এ ছাড়া আরও প্রায় ২০০ নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এটা স্পষ্ট যে বিবাদীরা হত্যার উদ্দেশ্যেই আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছেন, যা বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত ছবি থেকে স্পষ্ট।
মামলার আবেদনে জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি সাখাওয়াত হোসেনসহ ১১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
আদালতে মামলার আবেদন শেষে রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এটা চরম অন্যায় করা হয়েছে। সংবিধানে এখনো যতটুকু গণতন্ত্রের অধিকার দেওয়া আছে, তাতে সমাবেশ ও র্যালি করার অধিকার আছে। সেই অধিকারটুকুও তারা হরণ করেছে। এটি যে আমরা বারবার বলি, সেটার প্রমাণ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জে ১ সেপ্টেম্বরের এ ঘটনা। গণতন্ত্রে যে অধিকারগুলো দেওয়া আছে, তারা পুরোটাই রাখতে চায় না। আমরা বলেছি, একদলীয় সরকারের যে নমুনা, সেটার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ সেদিন ঘটেছে এখানে।’