৪০ বছর ধরে পটুয়াখালীর বাড়িটি ‘বকের বাড়ি’

টানা ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে খানবাড়ির আঙিনা ও গাছগাছালিতে বাস করছে হাজারো সাদা বক। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নুরাইনপুর গ্রামেছবি: প্রথম আলো

পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নুরাইনপুর গ্রামে আছে ‘খানবাড়ি’। বাড়িটি এখন স্থানীয়ভাবে পরিচিত ‘বকের বাড়ি’ নামে। কারণ, টানা ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বাড়ির আঙিনা ও গাছগাছালিতে বাস করছে হাজারো সাদা বক। শুধু বকই নয়, কয়েক বছর ধরে তাদের সঙ্গে এসেছে পানকৌড়িও। এ দুই প্রজাতির পাখি প্রতিবছর প্রজনন মৌসুমে এখানে দল বেঁধে আসে, বাসা বানায়, ডিম পাড়ে, বাচ্চা ফোটায়—সব মিলিয়ে বাড়িটি এখন তাদের অভয়ারণ্য।

গাছের ডালে শত শত বাসা

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, খানবাড়ির রেইনট্রি, গাব ও আমগাছের ডালে শত শত বাসা। সাদা বকগুলোকে ছোট ছোট ডাল সংগ্রহ করে বাসা বানাতে দেখা গেল। কোনো কোনো বাসায় ডিমে তা দিচ্ছে মা-পাখি, আবার কোথাও সদ্য ফোটা ছানাকে খাওয়াচ্ছে মা–পাখি। গাছের ডালে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা ধবধবে সাদা বক আর কালো পানকৌড়ির দৃশ্য পথচারীদের চোখে পড়ে সঙ্গে সঙ্গে।

আরও পড়ুন

খানবাড়ির বাসিন্দা মাওলানা মো. বশির উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বাড়িতে ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে বক পাখি বাস করছে। পাঁচ-সাত বছর আগে পানকৌড়িও যোগ দেয়। আমরা কখনো তাদের বিরক্ত করি না। পাখিরা নিরাপদে আছে বলেই প্রতিবছর ফিরে আসে।’

আরেক বাসিন্দা রাশেদ আজমি বলেন, তাঁর জন্মেরও আগে থেকে পাখিদের বসবাস চলছে। টিনের ছাউনি নষ্ট হওয়ায় ঘরসংলগ্ন কিছু গাছ কাটতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। ফলে পাখির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। তাঁর দাদা আবদুল মজিদ খান তাঁদের পাখির সুরক্ষার বিষয়টি শিখিয়েছিলেন। এর সঙ্গে তিনি যুক্ত করেন, প্রতিবছর বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বক ও পানকৌড়ি বাসা বাঁধে। প্রথম দফায় ডিম ফোটার পর ছানারা উড়তে শেখে। পরে শ্রাবণে আবার নতুন বাসা তৈরি হয় এবং দ্বিতীয় দফায় বাচ্চা ফোটে। আশ্বিন-কার্তিক নাগাদ সব পাখি একসঙ্গে চলে যায়। তবে প্রথম দফার বড় হয়ে ওঠা ছানারা তখনো থেকে যায়।

খানবাড়ির রেইনট্রি, গাব ও আমগাছের ডালে শত শত বাসা। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার নুরাইনপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

খানবাড়িতে প্রতিদিন ভিড় করেন পাখিপ্রেমী দর্শনার্থীরা। আশপাশের এলাকা তো বটেই, দূরদূরান্ত থেকেও মানুষ আসেন শুধু এই দৃশ্য দেখতে।

পরিবেশকর্মীদের কথা

দীর্ঘদিন ধরে পাখি রক্ষায় কাজ করছেন এম এ বশার। তিনি স্থানীয় একটি সংগঠন সেভ দ্য বার্ড অ্যান্ড বি পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, ‘খানবাড়িকে কেন্দ্র করে পাখিদের যে অভয়ারণ্য গড়ে উঠেছে, এটা আমাদের গর্ব। তবে কিছু গাছ কাটায় পাখির সংখ্যা কমেছে, যা কষ্ট দেয়।’

সরকারিভাবে এটিকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা উচিত বলে মনে করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বাউফল শাখার সভাপতি এইচ এম শহীদুল হক।

আরও পড়ুন