সিটি স্ক্যান যন্ত্র নষ্ট পাঁচ মাস, বিপাকে রোগীরা 

৩০ জুলাই সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। চালু থাকাকালে প্রতিদিন ৩০-৩৫ জন রোগী সেবা পেতেন।

পাঁচ মাস ধরে সিটি স্ক্যান মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সম্প্রতি সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেছবি: প্রথম আলো

সাতক্ষীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সিটি স্ক্যান যন্ত্রটি পাঁচ মাস ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এতে রোগীদের বাইরের রোগনির্ণয় কেন্দ্র বা হাসপাতালে গিয়ে দ্বিগুণ টাকা খরচ করে সিটি স্ক্যান করতে হচ্ছে। এতে গরিব রোগীদের বেশি সমস্যা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের টেকনোলজিস্ট আবদুল হালিম জানান, ‘সিটি স্ক্যান মেশিনটি স্থাপনের পর টানা সাত বছর সার্ভিস দিয়েছে। যদিও মেশিনটি ওয়ারেন্টি ছিল পাঁচ বছরের। সেই হিসাবে দুই বছর আগেই মেশিনটির ওয়ারেন্টির সময় শেষ হয়েছে। হঠাৎ করে ৩০ জুলাই মেশিনটির কুলিং সিস্টেম ও দুটি হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যায়। এসব যন্ত্র মেরামত করতে অনেক টাকা লাগবে। সিটি স্ক্যান মেশিনটি মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে আজও এটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।’ 

টেকনোলজিস্ট আবদুল হালিম আরও জানান, চালু থাকাকালে প্রতিদিন তাঁরা ৩০-৩৫ জন রোগীর সিটি স্ক্যান করেছেন। পাঁচ মাস ধরে এটি অচল থাকার বিষয়টি এখন অনেকেই জানেন। তারপরও প্রতিদিন ১২-১৫ জন রোগী আসেন। কিন্তু সিটি স্ক্যান করাতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন তাঁরা।

হাসপাতালের পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জাপান থেকে আমদানি করা ১১ কোটি টাকা মূল্যের সিটি স্ক্যান যন্ত্রটি হাসপাতালে স্থাপন করা হয়। সিটি স্ক্যান মেশিনটি স্থাপনের পর জেলা ও জেলার বাইরে থেকে সাধারণ রোগী কম খরচে এখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারতেন। এখানে রোগের ধরন অনুযায়ী দুই হাজার–চার হাজার টাকায় সিটি স্ক্যান করা হয়। কিন্তু ক্লিনিক থেকে করতে হলে দ্বিগুণ টাকা খরচ হয়। অনেক ক্ষেত্রে রিপোর্টও সঠিক আসে না। 

হাসাপাতালের পরিচালক মো. কুদরত–ই-খোদা জানান, সিটি স্ক্যান যন্ত্র দ্রুত মেরামতের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে একাধিকবার চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। গরিব ও সাধারণ রোগীদের কথা চিন্তায় নিয়ে তিনি দুইবার নিজে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়েছেন। সর্বশেষ প্রায় দুই মাস আগে ন্যাশনাল ইলেকট্রো মেডিকেল ইকুইপমেন্ট মেইনটেন্যান্স ওয়ার্কশপ অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার (নিমিউ অ্যান্ড টিসি) থেকে ৫৮ লাখ টাকার একটি প্রাক্কলন প্রস্তাব তৈরি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে খরচের বিষয়টি (প্রাক্কলন প্রস্তাব) যাচাই করার জন্য মন্ত্রণালয় থেকে আবার নিমিউ অ্যান্ড টিসিতে পাঠানো হয়েছে। যন্ত্রটি কবে মেরামত হবে, তা বলা যাচ্ছে না। 

শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের বাড়ি শেফালি খাতুন (৫২)। তলপেটে ব্যথা নিয়ে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ১০ দিন আগে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসক তাঁকে সিটি স্ক্যান করাতে বলেছেন। বাইরে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সিটি স্ক্যান করাতে গেলে কমপক্ষে আট হাজার টাকা খরচ পড়বে। তিনি জানালেন, বাইরে গিয়ে সিটি স্ক্যান করানোর মতো টাকা তাঁর কাছে নেই। এ জন্য তিনি ফিরে যাচ্ছেন। সিটি স্ক্যান যন্ত্র্রটি নষ্ট হওয়ায় অনেক রোগী প্রতিদিন ফিরে যাচ্ছেন। 

সাতক্ষীরা শহরের মধুমল্যারডেঙ্গি এলাকার শাহাজাদা খাতুনের (৫৫) সম্প্রতি মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়। চিকিৎসক বলেছেন সিটি স্ক্যান করাতে। কিন্তু সিটি স্ক্যান যন্ত্র নষ্ট থাকায় ফিরে যেতে হয়েছে তাঁকে। 

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) স্বাস্থ্য উপকমিটির আহ্বায়ক সুশান্ত কুমার ঘোষ বলেন, সাতক্ষীরা জেলাসহ আশপাশের জেলা থেকেও সাধারণ মানুষ কম খরচে উন্নত চিকিৎসার পেতে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসেন। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের সিটি স্ক্যান মেশিনটি দীর্ঘ সাড়ে চার মাস ধরে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। ফলে গরিব রোগীরা অল্প খরচে সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।