ফরিদপুরে মন্ত্রী আবদুর রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পায়নি আওয়ামী লীগের একাংশ
ফরিদপুর-১ (বোয়ালমারী, আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য আবদুর রহমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ায় তাঁকে সংবর্ধনা দিচ্ছে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগ। আগামীকাল শনিবার বেলা ৩টায় ফরিদপুর শহরের আলীপুর মোড়ে মুজিব সড়কে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য এ কে আজাদ এবং তাঁর সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করবেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান কেন্দ্র করে মুজিব সড়কের ওপরে মঞ্চ নির্মাণের কাজ চলছে। এ অনুষ্ঠান ঘিরে তোরণ, বিলবোর্ড, ব্যানার–ফেস্টুনে ভরে তোলা হয়েছে ফরিদপুর সদরের মুন্সি বাজার থেকে শুরু করে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের নদী গবেষণা ইনস্টিটিউট, ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ভাঙ্গার রাস্তার মোড়, হাজরাতলার মোড়, গোরস্থানের মোড়, আলীপুর মোড়, জনতা ব্যাংকের মোড়, সুপারমার্কেটের মোড়সহ ফরিদপুর সার্কিট হাউস পর্যন্ত সমগ্র এলাকা। শহরে আজ শুক্রবার এ উপলক্ষে মাইকিং শুরু হয়েছে। তাতে সর্বস্তরের জনগণকে দলে দলে যোগ দিয়ে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সফল করে তোলার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে।
এ কে আজাদপন্থী জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভী মাসুদ বলেন, ‘রহমান ভাইকে (আবদুর রহমান) জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে যে সংবর্ধনা জানানো হবে, তাতে আমিসহ এ কে আজাদের অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।’
সর্বস্তরের জনগণকে যে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আহ্বান জানানো হচ্ছে, সেখানে অনুষ্ঠান যেখানে হচ্ছে, সেই সদরের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ কে আজাদ ও তাঁর সমর্থকদের আমন্ত্রণ না জানানোয় সমালোচনা চলছে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কমিটির সদস্য সুবল চন্দ্র সাহা প্রথম আলোকে বলেন, আবদুর রহমানকে জেলা আওয়ামী লীগ সংবর্ধনা দেবে, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি জানান, আজ পর্যন্ত তিনি এ অনুষ্ঠানের কোনো আমন্ত্রণ পাননি।
এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ কে আজাদের অনুসারী–সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সুবল চন্দ্র সাহা বলেন, ‘এটা অনেক ছোট মনের ব্যাপার।’
এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আজাদপন্থী জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি আমন্ত্রণ পাননি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ। তিনি ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বিপুল ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, যেদিন আবদুর রহমান মন্ত্রিত্বের শপথ নেন, সেদিন রাতে তিনি, এ কে আজাদসহ জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা আবদুর রহমানের ঢাকার বাসায় গিয়ে তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে এসেছিলেন। ফরিদপুরে মন্ত্রীর সংবর্ধনার বিষয়ে বিপুল ঘোষ বলেন, ‘আমি এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ পাইনি।’
ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শামীম হক ও কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল ঘোষের নেতৃত্বে দুভাগে বিভক্ত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরিদপুর-৩ (সদর) আসনে দলীয় মনোনয়ন পান শামীম হক। তবে আওয়ামী লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দিলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এ কে আজাদ। নির্বাচনে প্রায় ৭০ হাজার ভোটের ব্যবধানে শামীম হককে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এ কে আজাদ। এর পর থেকে জেলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শামীম হকের অনুসারী তিনজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনের পর সবার সামনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া উচিত। ফরিদপুরের উন্নয়নে একসঙ্গে কাজ করতে হলে এ ধরনের বিভেদ শুভ হবে না। আবদুর রহমান জেলার মন্ত্রী, তাই জেলার সবকিছু তাঁকে দেখতে হবে। এ জন্য কাউকে দূরে রেখে এ ধরনের সংবর্ধনার আয়োজন আওয়ামী রাজনীতিতে কিংবা ফরিদপুরের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ রাখতে ভালো কোনো ফল দেবে না।
জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস বলেন, ‘আমরা এ কে আজাদ কিংবা তাঁর অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতাদের এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাইনি। প্রথমত, এ কে আজাদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দলীয় প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি দলীয় সংসদ সদস্য নন। পাশাপাশি তাঁর যেসব অনুসারী ২ জানুয়ারি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় যাননি, তাঁদের আমন্ত্রণ জানানোর প্রয়োজন আছে বলে মনে করিনি। নেত্রীর জনসভা যাঁরা অবজ্ঞা করতে পারেন, তাঁরা আর যা–ই হোক না কেন, আওয়ামী লীগ করেন বলে আমরা মনে করি না।’
২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় অংশ না নেওয়ার বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান কমিটির সদস্য সৈয়দ মাসুদ হোসেন বলেন, ‘২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর অনুষ্ঠান মঞ্চে থাকতে করোনা পরীক্ষাসহ বিশেষ নিরাপত্তা পাস প্রয়োজন। তার কিছুই আমাদের দিয়ে করানো হয়নি, নিরাপত্তা পাসও দেওয়া হয়নি। অথচ তিন মাস আগে গত ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী ভাঙ্গায় যে জনসভা করেছিলেন, সেই অনুষ্ঠানে আগে থেকে আমাদের করোনা পরীক্ষা করিয়ে বিশেষ পাস আগেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। ২ জানুয়ারি এসব না করায় আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও নেত্রীর জনসভায় যাওয়া সম্ভব হয়নি।’