বায়েজিদের মা আঞ্জুয়ারা বেগম বলেন, ‘টাকাপায়সা নাই জন্যে ছাওয়াটার একবার লেখাপড়া বন্ধ করি দিছনো। কিন্তু ওয় ডাক্টার হইবে জন্যে মাইনসের ছাওয়াক পড়ে লেখাপড়া করছে। ঈদে ছাড়া পোশাক দিবার পাই নাই, খালি পেটে স্কুল–কলেজ গেইছে। কষ্ট করি ছাওয়াটা ডাক্তারিত চান্সও পাইছে। কিন্তু ডাক্তারি পড়াইতে তো মেলা টাকা নাগে, মোর তো বাড়ি ভিটা ছাড়া কিছুই নাই।’
বায়েজিদ সরকার ২০২০ সালে কাশিয়াবাড়ি স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ ও ২০২২ সালে নীলফামারী সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এবার মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১ হাজার ৭৪৩তম হয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজে ভর্তি সুযোগ পেয়েছেন। মাধ্যমিকে উঠেই বায়েজিদ নিজের লেখাপড়া খরচ চালাতে প্রতিবেশী শিশুদের প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। এরপর নীলফামারীতে ভর্তি হলেও সেখানে প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়া খরচ চালান।
সম্প্রতি বায়েজিদদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরোনো মাটি ঘরে তাঁদের বসবাস। টিনের চাল জরাজীর্ণ। সেই ঘরের ভেতরে তাঁর মা আঞ্জুয়ারা বেগম খাঁচা থেকে পোষা কয়েকটি মুরগি ছেড়ে দিচ্ছেন। আর চালের খুদ ছেটাচ্ছেন বায়েজিদ। সেখানে আলাপকালে বায়েজিদ বলেন, ‘আমার বাবা অন্যের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পায়, বাজারের জিনিসপত্রের যে দাম তা দিয়ে আমাদের দুই বেলার খাবার এখন হয় না। প্রাইভেট পড়িয়ে এত দূর এসেছি। পরীক্ষার ফরম ফিলআপ, কলেজে ভর্তির সময় বাবা অনেক টাকা ঋণ করেছে। সেগুলো এখনো শোধ দিতে পারেনি। মেডিকেলে ভর্তির ও পড়ালেখা করানোর মতো টাকা জোগাড়ের সামর্থ্য বাবার নেই।’
বায়েজিদ সরকার আরও বলেন, মেডিকেলে ভর্তি হতে ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো লাগবে। বই ও অনুষঙ্গিক খরচ তো আছে। কীভবে এখন পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন, বুঝতে পাচ্ছেন না?
কুর্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য তুহিনুর ইসলাম বলেন, বায়েজিদ খুবই মেধাবী ছেলে। তাঁর পরিবার খুবই দরিদ্র। মেডিকেলে পড়ানোর মতো সামর্থ্য তাঁর বাবার নেই। সমাজের বিত্তবান ও সহৃয়দবান মানুষ যদি সহযোগিতার হাত বাড়ান, তবে বায়েজিদের চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হবে।