রাজশাহীতে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে দোকানে ঢুকল বালুভর্তি ট্রাক, বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ

রাজশাহীর পবা উপজেলায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গভীর রাতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি দোকানের ভেতর ঢুকে যায় বালুভর্তি ট্রাক। বুধবার কাটাখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডেছবি: প্রথম আলো

রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভার শ্যামপুর এলাকায় গভীর রাতে দুটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। একটি বালুভর্তি ট্রাক গাছপালা ও বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে রাস্তার পাশে দোকানে ঢুকে গেছে। রাস্তার পাশে আরেকটি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে দিয়ে আরেকটি ট্রাক পালিয়ে গেছে। আজ বুধবার ভোররাতে কাটাখালী পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডে এ ঘটনা ঘটে।

পরে দোকানে ঢুকে যাওয়া ট্রাকটি কেটে চালকের সহকারীকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বিদ্যুতের দুটি খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় ভোররাত থেকে ওই এলাকা বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্ন রেখেছে নেসকো। দুপুরের দিকে দোকান থেকে ট্রাকটি সরানো হয়েছে। বিদ্যুতের লাইন সংস্কারে সকাল থেকে কাজ করছেন নেসকোর লোকজন।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোর চারটার দিকে শ্যামপুর বালুঘাট থেকে আসা বালুভর্তি একটি ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে বিদ্যুতের খুঁটি এবং বেল, মেহগনি ও কাঁঠালগাছ গুঁড়িয়ে দোকানের ভেতর ঢুকে যায়। ট্রাক থেকে চালক মো. ছোটন বের হতে পারলেও সহকারী মাহাবুল আটকে যান। ভোরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে ট্রাকের সামনের অংশ কেটে মাহাবুলকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। তাঁর একটি পা ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দোকানে ট্রাক ঢুকে পড়ার ঘটনায় স্থানীয় লোকজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে ঘাটের দিকে আরেকটি ট্রাক আসতে দেখলে এলাকাবাসী ট্রাকটিকে ধাওয়া করেন। তখন ওই ট্রাকের ধাক্কায় বিদ্যুতের আরেকটি খুঁটি ভেঙে যায়। ট্রাকটিকে ধরতে পারেননি এলাকাবাসী।

এলাকাবাসীর ধাওয়ায় চলে যাওয়ার সময় আরেকটি ট্রাক বিদ্যুতের খুটিতে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়। খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বিদ্যুৎ সংযোগ
ছবি: প্রথম আলো

দোকানের মালিক শাহানা বেগম বলেন, ভোররাতে ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ ভূমিকম্পের মতো শব্দ শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বের হয়ে দেখেন, দোকানের ভেতরে ট্রাক ঢুকে গেছে। তাঁর বাড়িরও ক্ষতি হয়। তিনি ক্ষতিপূরণ চান।

শাহানা বেগম স্থানীয় রাকিবুল ইসলামকে দোকানটি ভাড়া দিয়েছেন। ইলেকট্রনিকস আর টেলিকম ব্যবসা করেন রাকিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, দোকানে ভোরে এসে মোবাইল রিচার্জের কার্ড আর নগদ টাকা পাননি। দোকানে সাড়ে তিন লাখ টাকার মালামাল ছিল। অল্প কিছু তার ছাড়া সব নষ্ট হয়ে গেছে।

কাটাখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. তৌহিদুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় দুটি বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে গেছে। একটি দোকানে ট্রাক ঢুকে গেছে। তাঁরা ট্রাকটি জব্দ করে থানায় নিয়ে গেছেন। এ ঘটনায় নেসকোর প্রকৌশলীরা কাজ করছেন। কেউ থানায় অভিযোগ দিলে তাঁরা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

শ্যামপুর এলাকায় ‘নর্থ বেঙ্গল ইন্টারনেট’ নামের ইন্টারনেট সেবা দেন মো. শাকিব। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়ায় তাঁর ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, ‘পদ্মার বাঁধের ওপর দিয়ে গাড়ি চলাচল বন্ধ করা হয়েছিল। আবার রাস্তা বের করে বালু আনছে। তাদের জন্য এটা সুবিধার রাস্তা। তারা ৫০-৬০ কিলোমিটার গতিতে গাড়ি চালায়। আশপাশের বাড়িঘর খালি কাঁপে।’

আরও পড়ুন
রাজশাহীর পবা উপজেলার শ্যামপুরের এই এলাকায় পদ্মা নদীর বাঁধের ওপর প্রতিবন্ধক (বার) করে দেয় সিটি করপোরেশন। কিন্তু প্রতিবন্ধকের পাশ দিয়ে ট্রাক যাতায়াত করে
ছবি : প্রথম আলো

এর আগে গত নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পদ্মার বাঁধের প্রতিবন্ধক খুলে খালি ট্রাক চলাচল শুরু করে। তখন ইজারাদারের বিরুদ্ধে রাস্তা ব্যবহারের জন্য বালুভর্তি প্রতি ট্রাকে ১০০ টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগ করেন চালকেরা। ওই সময় দিনে আদায় করা হয় ৩০ হাজার টাকা। এ নিয়ে প্রথম আলোতে ১৫ নভেম্বর ‘দিনে অতিরিক্ত আদায় হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তার দুই দিন পর চাঁদা নেওয়া বন্ধ হয়ে যায় এবং ট্রাক চলাচলও বন্ধ হয়। সম্প্রতি আবার ট্রাক চলাচল শুরু হয়েছে।

কাটাখালী পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক ও বালুঘাটের ইজারাদার জনি ইসলাম বলেন, তাঁদের ধারণা, চালক ঘুম ঘুম চোখে গাড়ি চালিয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছেন। এলাকাবাসীর যে ক্ষতি হয়েছে, তাঁরা বসে পূরণ করার চেষ্টা করবেন। ট্রাক চলাচলে নিষেধ থাকার পরও কেন চলছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গাড়ি চালানোর রোড পারমিট থাকলে চলতে পারে যেকোনো রাস্তা দিয়ে। এখানে কোনো নিষেধ নেই। নদীর ধারে রাস্তার মুখ বন্ধ থাকায় ট্রাক চলাচল বন্ধ ছিল কয়েক দিন। বাঁধেরও কোনো ক্ষতি হচ্ছে না।’