সেই সাহেব আলী ক্যানসারে আক্রান্ত, অর্থাভাবে চলছে না চিকিৎসা

নিজ বাড়িতে অসুস্থ সাহেব আলী। বুধবার পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

নিজ বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের ৬৬টি ভাস্কর্য নির্মাণকারী দিনমজুর সাহেব আলী (৫৮) দুরারোগ্য ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। ১৬ ও ১৪ বছরের দুই ছেলে আগে বাবার সঙ্গে দিনমজুরির কাজে সহযোগিতা করত। এখন নিজেরা দিনমজুরি করে। তবে তাদের আয়ে বাবার চিকিৎসা তো দূরের কথা, সংসারের খরচই চলে না।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার আউলিয়াপুর গ্রামে বাড়ি সাহেব আলীর। তাঁর বড় ছেলে হাসান খান (১৬) প্রথম আলোকে বলে, কয়েক মাস আগে তার বাবাকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলামকে দেখানো হয়। তিনি তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যেতে বলেন। ধারদেনা করে তাঁকে ঢাকায় নিয়ে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এম কামাল হোসেনকে দেখানো হয়। ওই চিকিৎসক জানান, তাঁর খাদ্যনালিতে থাকা টিউমারে ক্যানসারের জীবাণু রয়েছে, যা ছড়িয়ে পড়ছে।

আরও পড়ুন

সাহেব আলী এখন পানি ছাড়া কিছুই খেতে পারেন না জানিয়ে হাসান খান বলে, তার বাবার চিকিৎসায় কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা দরকার। টাকার অভাবে তাদের তিন বেলা আহার জোটে না, চিকিৎসা করাবে কীভাবে।

সাহেব আলী নিজ বাড়ির নাম দিয়েছেন ‘ভাস্কর্য ও শিশু বিনোদনকেন্দ্র’। বাড়ির উঠানে তাঁর নির্মাণ করা ৬৬টি ছোট-বড় ভাস্কর্যে উঠে এসেছে মহান ভাষা আন্দোলন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের নৃশংসতাসহ দেশের ইতিহাস। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরও পাঁচটি ভাস্কর্য নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সাহেব আলীর। কিন্তু ক্যানসারের কারণে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ায় সে ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে না।

গত রোববার আউলিয়াপুর গ্রামের ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ঝুপড়িতে বিছানায় শুয়ে আছেন অসুস্থ সাহেব আলী। ঘরটির ওপরে টিনের চালা থাকলেও চারপাশে নেই বেড়া। পলিথিন দিয়ে বেড়ার কাজ চালানোর চেষ্টা করা হলেও তাতে ঠেকানো যাচ্ছে না শীত। ঘরে ঢুকছে শীতের ঠান্ডা বাতাস। এতে করে অসুস্থ সাহেব আলীর কষ্ট আরও বাড়ছে। দেখভাল করার কেউ না থাকায় তাঁর নির্মিত ভাস্কর্যগুলো অযত্নে বিবর্ণ হতে চলেছে।

নিজের বাড়িতে বানানো ভাস্কর্যের সামনে সাহেব আলী
ছবি : প্রথম আলো

কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল সাহেব আলীর। আস্তে আস্তে ভাঙা গলায় তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘৭১টি ভাস্কর্য নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু অর্থাভাবে সবগুলো নির্মাণ করতে পারিনি। মনে হয়, আমার এ স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে। আমি বাঁচতে চাই। স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’

সাহেব আলীকে বাঁচিয়ে তুলতে চান পরিবারের সদস্যরা। তাঁর চিকিৎসার সহায়তায় হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীসহ দেশের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

সাহেব আলীকে সাহায্য পাঠানোর ঠিকানা: সাহেব আলী, সঞ্চয়ী হিসাব নম্বর ৪৩১৪১০১০২২৬১৮, সোনালী ব্যাংক, নিউ টাউন শাখা, পটুয়াখালী। বিকাশ নম্বর: ০১৮৪৫২৯৩৩৮২।