কয়রায় শেষ মুহূর্তে তিন প্রার্থীর হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস

কয়রা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী (বাঁ থেকে) এস এম শফিকুল ইসলাম, জি এম মহসীন রেজা ও অনাদী সানা
ছবি: সংগৃহীত

খুলনার কয়রা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বাকি মাত্র দুই দিন। ৯ জুন অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় কিছুটা ভাটা পড়লেও তিন দিন ধরে আবার বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছে প্রচারণা। শেষ মুহূর্তে প্রার্থীদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকেরা বলছেন, বিএনপি ও জামায়াত ভোট বর্জন করেছে। চেয়ারম্যান পদের তিন প্রার্থীই আওয়ামী লীগের। এ জন্য শেষ মুহূর্তে এসে নানা কৌশলে নিজ দলীয় কর্মী-সমর্থকদের ভোট টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন তিন প্রার্থী।

চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রার্থী হলেন উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এস এম শফিকুল ইসলাম (আনারস প্রতীক), উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মহসীন রেজা (মোটরসাইকেল প্রতীক) এবং আওয়ামী সমর্থক আইনজীবী অনাদী সানা (ঘোড়া প্রতীক)।

আরও পড়ুন
ভোট নিয়ে এলাকায় তেমন মাতামাতি নেই। তবে শফিকুল ইসলাম মাঠের প্রচারে ফেরায় নির্বাচন আর একতরফা হবে না। এ ছাড়া কয়রা উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটও নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। নির্বাচন এলেই সম্প্রদায়গত ভোটের হিসাব-নিকাশও সামনে চলে আসে বরাবরই। সে হিসেবে নতুন প্রার্থী অনাদী সানা এই ভোট নিজের পক্ষে টানতে পারেন। শেষ মুহূর্তে মনে হচ্ছে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।
শেখ মনিরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক, সুশাসনের জন্য নাগরিক কয়রা শাখা

স্থানীয় ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এর মধ্যে অনাদী সানা এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। মাঠে তাঁর তেমন কর্মী-সমর্থক বা পরিচিতি না থাকায় সবার ধারণা ছিল, মহসীন ও শফিকুলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। তবে গত ২২ মে অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বর্তমান চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম নির্বাচনের মাঠে না থাকার ঘোষণা দেন। এরপর মহসীন রেজার অনুসারীরা অনেকটা নির্ভার ছিলেন। সে সময় মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চলে আসেন নতুন মুখ অনাদী সানা। তাঁর কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটের হিসাব-নিকাশও সামনে চলে আসে। তবে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে ২৯ মে অনুষ্ঠিত নির্বাচন স্থগিত হওয়ার পর বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম এলাকায় ফিরে আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন। এতে পাল্টে যায় নির্বাচনী মাঠের দৃশ্যপট। শুরু হয় নতুন হিসাব–নিকাশ।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) কয়রার সাধারণ সম্পাদক শেখ মনিরুজ্জামান বলেন, ভোট নিয়ে এলাকায় তেমন মাতামাতি নেই। তবে শফিকুল ইসলাম মাঠের প্রচারে ফেরায় নির্বাচন আর একতরফা হবে না। এ ছাড়া কয়রা উপজেলায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটও নির্বাচনে প্রভাব ফেলে। নির্বাচন এলেই সম্প্রদায়গত ভোটের হিসাব-নিকাশও সামনে চলে আসে বরাবরই। সে হিসেবে নতুন প্রার্থী অনাদী সানা এই ভোট নিজের পক্ষে টানতে পারেন। শেষ মুহূর্তে মনে হচ্ছে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফজলুল হক বলেন, নির্বাচনের শুরুতেই বর্তমান ও সাবেক চেয়ারম্যানের সমর্থকেরা মাঠ জমিয়ে রেখেছিলেন। মাঝপথে বর্তমান চেয়ারম্যান অসুস্থ হয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন, এমন খবরে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন ধরে নেওয়া হয়েছিল। অনেকেই মনে করেছিলেন, নতুন প্রার্থী অনাদী সানা তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারবেন না। নির্বাচন একতরফা হতে যাচ্ছে এমন ভাবনায় আগ্রহ কমে যায়, তবে বর্তমান চেয়ারম্যান আবার প্রচারণায় ফেরায় জমজমাট প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।

আরও পড়ুন

বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর নির্বাচনের আগ্রহে অনেকটা ভাটা পড়েছিল। তবে শেষ মুহূর্তে এসে তিন প্রার্থীর কর্মীরা ভোট প্রার্থনায় মাঠে নামায় দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। তাঁরা দিন-রাত মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। একই সঙ্গে তিন প্রার্থী পথসভা ও গণসংযোগ বাড়িয়ে দেওয়ায় নতুন করে ভোটের আলোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে এলাকা। কোন প্রার্থী কত ভোট পাবেন, তা নিয়ে চলছে চায়ের টেবিলে বিশ্লেষণ।

চেয়ারম্যান প্রার্থী শফিকুল ইসলামের চাচাতো ভাই কয়রা সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাহারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘অসুস্থতার কারণে শফিকুল ইসলাম নির্বাচনের সব প্রকার কার্যক্রম থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। তিনি এখনো শারীরিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ নন। তারপরও মানুষের আগ্রহ ও জনস্বার্থ বিবেচনায় ৯ জুন নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি তাঁর ছোট ভাই হিসেবে তাঁর পক্ষে সব নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করছি। তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে আশাবাদী।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি গাজী আজিজুল হক বলেন, ‘শফিকুল ইসলাম গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মহসীন রেজাকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ক্ষমতায় থেকে কাউকে হয়রানি করেননি। দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন। এলাকায় তাঁর ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। আমরা তাঁর সঙ্গে কাজ করছি। এবারও তিনি জনগণের রায় নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন।’

আরও পড়ুন

অন্যদিকে চেয়ারম্যান প্রার্থী জি এম মহসীন রেজার ছোট ভাই খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘কয়রার পরিবেশকে সুন্দর রাখতে আমার ভাইয়ের বিকল্প নেই, এই কথা সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে। ভোটারদের যেভাবে সাড়া ও আশ্বাস পাচ্ছি, তাতে ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে আমার ভাই নির্বাচিত হবেন।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিশিত রঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ মহসীন রেজার পক্ষে কাজ করছেন। আমরা উপজেলার সর্বত্র ভোটারদের কাছে গিয়ে মহসীন ভাইয়ের মোটরসাইকেল প্রতীকের পক্ষে ভোট চাচ্ছি। আশা করি, ৯ তারিখে আমরাই মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হব।’

সাতটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত এ উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৬ জন। ২৯ মে তৃতীয় ধাপে এ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে স্থগিত করা হয় নির্বাচন। পরে ৯ জুন ঘোষণা করা হয় নির্বাচনের তারিখ। এর পর থেকে দিন-রাত ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থী ও তাঁদের কর্মী–সমর্থকেরা। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিন প্রার্থী ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৯ জন ও ভাইস চেয়ারম্যান (নারী) পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিক-উজ-জামান বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন