সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে নির্বাচনী সরঞ্জামবাহী ট্রলারে গুলি, প্রাণে বাঁচলেন কর্মকর্তারা

ফাইল ছবিপ্রথম আলো

কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্থগিত কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ শেষে সেন্ট মার্টিন থেকে ফেরার পথে নির্বাচনী সরঞ্জাম ও কর্মকর্তাদের বহনকারী নৌযানে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এতে ট্রলারটি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ হতাহত হননি। গতকাল বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে শাহপরীর দ্বীপের বদরমোকাম এলাকায় বঙ্গোপসাগর ও নাফ নদীর মোহনায় এ ঘটনা ঘটে।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ঘটনাস্থল নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকায় অবস্থিত। সেখান থেকেই গুলি ছোড়া হয়েছে। তবে বাংলাদেশি ট্রলারটিতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি), নাকি বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি গুলি চালিয়েছে, তা রাত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ঘটনায় টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, গত ২৯ মে টেকনাফ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় ওই সময় সেন্ট মার্টিন দ্বীপের একটি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। গতকাল স্থগিত ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ হয়। ভোট গ্রহণ শেষে রাতে একটি ট্রলার নিয়ে নির্বাচনী সরঞ্জামসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সেন্ট মার্টিন থেকে টেকনাফ ফিরছিলেন।

ইউএনও যোগ করেন, ওই সময় উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সৈয়দ সাফকাত আলীর নেতৃত্বে নির্বাচনী কর্মকর্তারা ওই ট্রলারে অবস্থান করছিলেন। এটি টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথের বদরমোকাম এলাকায় পৌঁছালে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে ট্রলারের দিকে বৃষ্টির মতো এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। এ সময় শতাধিক গুলি ছোড়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি গুলি ট্রলারের গায়ে লাগলেও সৌভাগ্যক্রমে কর্মকর্তারা অক্ষত অবস্থায় টেকনাফ ফেরেন।

বদরমোকাম এলাকায় পৌঁছালে মিয়ানমারের নাইক্ষ্যংদিয়া থেকে ট্রলারের দিকে বৃষ্টির মতো এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়া হয়। এ সময় শতাধিক গুলি ছোড়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি গুলি ট্রলারের গায়ে লাগলেও সৌভাগ্যক্রমে কর্মকর্তারা অক্ষত অবস্থায় টেকনাফ ফেরেন।
মো. আদনান চৌধুরী, টেকনাফের ইউএনও

ট্রলারটির মাঝি মোহাম্মদ বেলাল ‍বলেন, এলোপাতাড়ি গুলি শুরু হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আত্মরক্ষার্থে ট্রলারের নিচে অবস্থান নেন। দ্রুতই ট্রলারটিকে শাহপরীর দ্বীপের দিকে নিয়ে আসা সম্ভব হওয়ায় প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন তাঁরা।

এদিকে সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে টানা তিন মাস ধরে ক্ষমতাসীন জান্তা বাহিনীর সঙ্গে কয়েকটি জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সংঘাত-লড়াই চলছে। সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপের উত্তর ও দক্ষিণ দিকের বেশ কিছু এলাকা ইতিমধ্যে দখলে নিয়েছে আরাকান আর্মির বিদ্রোহীরা। নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকাটিও কিছুদিন আগে আরাকান আর্মি দখলে নেয়। ধারণা করা হচ্ছে, বাংলাদেশি ট্রলারটিতে আরাকান আর্মি গুলি ছুড়েছে।

এ ঘটনার পর নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কোস্টগার্ডের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে কর্নেল মো. মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, নির্বাচনী সরঞ্জাম নিয়ে ফেরার পথে সার্ভিস ট্রলারে গুলিবর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বিজিপির কাছে প্রতিবাদ লিপি পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

আরও পড়ুন