সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলে-মেয়ে ও পুত্রবধূকে হারিয়ে নির্বাক গোলাম মোস্তফা

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত তিনজনের লাশ গতকাল শনিবার দাফন করা হয়। সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব বাঐতাড়া গ্রামেছবি: প্রথম আলো

তাঁর মুখে কোনো কথা নেই। নেই কোনো কান্নার শব্দও। সড়ক দুর্ঘটনায় ছেলে, পুত্রবধূ ও মেয়ে হারিয়ে গোলাম মোস্তাফা (৬৫) বাক্‌রুদ্ধ। গোলাম মোস্তাফাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সান্ত্বনা জানাচ্ছেন প্রতিবেশীরা। দুর্ঘটনার খবর শুনে এলাকার লোকজন ওই বাড়িতে ভিড় করছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব বাঐতাড়া গ্রামে গিয়ে এই দৃশ্য দেখা যায়।

গোলাম মোস্তাফা
ছবি: প্রথম আলো

গত শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম সংযোগ মহাসড়কে বাসচাপায় ব্যাটারিচালিত ভ্যানের তিন যাত্রী নিহত হন। তাঁরা হলেন পূর্ব বাঐতাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তাফার ছেলে সফিকুল ইসলাম (৩৫), সফিকুলের স্ত্রী সুবর্ণা খাতুন (২৫) ও ছোট বোন লাকী আক্তার (২৫)। এ ছাড়া ভ্যানচালকসহ ওই পরিবারের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন, নিহত সফিকুলের মা রঙ্গিলা বেগম (৫৫), ভাবি জোবাইদা খাতুন (৩৫), তাঁর মেয়ে রাইসা খাতুন (৩) ও ভ্যানচালক নুরুল ইসলাম (৪৬)। তাঁদের সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনজনের লাশ গতকাল বেলা তিনটার দিকে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নিহত সফিকুল ইসলামের চাচা শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে নাবিল পরিবহনের অজ্ঞাতনামা চালকের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ভাতিজা (সফিকুল) গ্রিসপ্রবাসী। সপ্তাহ দুই আগে বাড়িতে এসেছে। পাকা বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিল। এরই মধ্যে সে মারা গেল।’

নিহত সফিকুলের মামাশ্বশুর হাবিবুর রহমান বলেন, ‘শুক্রবার রাতে আমাদের বাড়িতে সফিকুলদের সবার দাওয়াত ছিল। সফিকুল ও তার পরিবারের সদস্যরা আমাদের বাড়িতে আসছিল। দুর্ঘটনার দুই মিনিট আগেও আমার সঙ্গে সফিকুলের মুঠোফোনে কথা হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে আমাদের বাড়িতে পৌঁছার কথা ছিল। একটু পরেই দুর্ঘটনার খবর শুনি।’

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, মামলা করার পর তথ্য–প্রযুক্তির সহায়তায় নাবিল পরিবহনের বাসটির নম্বর শনাক্ত করা গেছে। বাসটির চালককে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় ব্যাটারিচালিত ভ্যানে করে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের মুলিবাড়ী এলাকা থেকে কড্ডার মোড়ের দিকে যাচ্ছিলেন পরিবারটির ছয় সদস্য। ওই সময় উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী নাবিল পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস মুলিবাড়ী-কড্ডার মোড়ের মধ্যভাগে পৌঁছায়। ভ্যানটি হঠাৎ মহাসড়ক পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী বাসটি সেটিকে চাপা দিয়ে চলে যায়। এ সময় ভ্যানটি দুমড়েমুচড়ে গিয়ে যাত্রী, চালকসহ সাতজন গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিত্সক তিনজনকে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদের হাসপাতালে চিকিত্সা চলছে।