রংপুর-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা আওয়ামী লীগের দুই নেতার

বিশ্বনাথ সরকার ও সুমনা আক্তার
ছবি: সংগৃহীত

রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে দুই নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ওই দুই নেতা হচ্ছেন কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার ওরফে বিটু এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সুমনা আক্তার ওরফে লিলি। বিশ্বনাথ সরকারের পক্ষে গতকাল সোমবার এবং সুমনা আক্তারের পক্ষে আজ মঙ্গলবার স্থানীয় নির্বাচন কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এতে তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী।

আরও পড়ুন

বিশ্বনাথ সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারে জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর করতে দলের যে কারও প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এ কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছি। স্থানীয়ভাবে কার জনপ্রিয়তা বেশি, সেটা নেত্রীকে দেখানোর সুযোগ পেয়েছি। ভোটের মাঠে আমি নৌকার প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি। ভোটারদের সঙ্গে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েও আসনটি নেত্রীকে উপহার দিতে পারব।’

বিশ্বনাথ সরকারের কর্মী-সমর্থকেরা জানান, ২০০৯ সালে বিশ্বনাথ সরকার বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীকে ১৪ হাজার ৪২২ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিশ্বনাথের প্রয়াত বাবা নলিনী চন্দ্র সরকার বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) টানা ৩০ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন। নলিনী চন্দ্র সরকার ১৯৮৬ সালে এই আসনে নির্দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে বিশ্বনাথ ঢাকার শাহবাগে গুরুতর আহত হয়েছিলেন। হাসপাতালে সে সময়ে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা।

আরও পড়ুন

বেলাল হোসেন ও নুর আলম নামে আওয়ামী লীগের দুই কর্মী জানান, বর্তমান সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ–বাণিজ্য, বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজকে সরকারীকরণের নামে কোটি টাকা বাণিজ্য, দলীয় নেতা-কর্মীদের অবমূল্যায়ন এবং দুর্নীতি-লুটপাটের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এসব কারণে এলাকার সাধারণ মানুষ তাঁর প্রতি ভীষণ ক্ষুব্ধ। তাঁর জনপ্রিয়তা অনেকটা শূন্যের কোঠায়। দুই মাস আগে বদরগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মাজেদ আলী খান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে কোটি টাকা নিয়ে কলেজটি সরকারীকরণের লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। এরপরও এবারে তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীসহ এলাকার সাধারণ ভোটাররা হতাশ হয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য আবুল কালাম মো. আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কলেজ সরকারীকরণে আমি কোনো টাকা নিইনি। এসব অপপ্রচার।’

আরও পড়ুন

এদিকে সুমনা আক্তারের কর্মী-সমর্থকেরা জানান, সুমনা আক্তার দুই মাস ধরে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ উপজেলার গ্রামেগঞ্জে ঘুরে বেড়িয়েছেন। মানুষের অভাব-অভিযোগ শুনেছেন।

সুমনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জের প্রতিটি পরিবার, গ্রাম ও মানুষ আমার অত্যন্ত আপনজন। সাধারণ মানুষের সুখী সমৃদ্ধ জীবন ও হাসিমাখা মুখ দেখতে পাওয়াই আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। যত দিন বেঁচে থাকব, মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। এই এলাকাকে সমৃদ্ধ স্মার্ট হিসেবে গড়তে আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। নৌকার প্রার্থীকে দেখিয়ে দিতে চাই, কার জনপ্রিয়তা বেশি। এই সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

আরও পড়ুন