কটিয়াদীতে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্নের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৫

কটিয়াদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি নয়ন মিয়া
ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি নয়ন মিয়াকে (৩৬) কুপিয়ে তাঁর দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আজ শনিবার কটিয়াদী থানায় হত্যাচেষ্টা ও অঙ্গহানির অভিযোগে মামলাটি করেন নয়নের ভাই শফিকুল ইসলাম। মামলার পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে ১৯ জনকে। প্রধান আসামি উপজেলার সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের রায়খলা গ্রামের আবু বক্কর মিয়া। তিনি আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত। মামলার বেশির ভাগ আসামি রায়খলা গ্রামের বাসিন্দা।
মামলাটির তদন্ত করছেন গচিহাটা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. আকতারুজ্জামান। তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে মামলার সব আসামির নাম প্রকাশ করা যাচ্ছে না। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে।

গত বৃহস্পতিবার রাত পৌনে নয়টার দিকে সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের গচিহাটা বাজার থেকে বাড়ি ফেরার পথে কাছারিপাড়া মোড়সংলগ্ন এলাকায় কুপিয়ে নয়ন মিয়ার দুই হাতের কবজি বিচ্ছিন্ন করে দেয় দুর্বৃত্তরা। তিনি এখন ঢাকার জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গু হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন। নয়ন মিয়া সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের সতরদ্রোন গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর বাবা শাহজাহান মিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান।

নয়নের মামাতো ভাই মো. ফয়সাল বর্তমানে ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে নয়নের পাশে আছেন। মুঠোফোনে ফয়সাল বলেন, নয়ন এখন কথা বলতে পারছেন। তবে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, শরীর থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণে এখনো নয়ন পুরোপুরি শঙ্কামুক্ত নন। তাঁর হাতের বাকি অংশ রক্ষা করা সম্ভব না–ও হতে পারে। নয়ন তাঁদের কাছে ঘটনার রাতের কিছু কথা বর্ণনা করে জানিয়েছেন, হামলাকারীদের একজন নয়নের হাত ধরেন, অন্য একজন কোপান। হামলাকারীদের কয়েকজনকে তিনি চিনতে পেরেছেন। এসব তথ্য পুলিশকেও জানানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই হামলার পেছনের রহস্য বের করতে পুলিশ এরই মধ্যে দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে। প্রথমত, সহশ্রাম ধুলদিয়া ইউনিয়নের রায়খলা ও সতরদ্রোন গ্রাম দুটি পাশাপাশি। সতরদ্রোন গ্রামে একটি খেলার মাঠ আছে। মাঠটিতে উভয় গ্রামের তরুণেরা ফুটবল ও ক্রিকেট খেলেন। মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায়ই দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে বিবাদ হয়। দেড় বছর আগে মাঠে ফুটবল খেলা নিয়ে দুই গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের সূত্র ধরে রায়খলা গ্রামের মো. হুমায়ুন নামের একজন খুন হন। এ ঘটনায় হুমায়ুনের ভাই মামুন বাদী হয়ে হত্যা মামলা করেন। মামলায় নয়নের বাবা শাহজাহান মিয়াকে প্রধান আসামি করা হয়। নয়ন মামলাটির ২ নম্বর আসামি। তবে অভিযোগপত্র থেকে দুজনের নাম বাদ দেওয়া হয়। বাদী এই বিষয়ে আপিল করেন। দেড় বছর আগের ঘটনা নিয়ে দুই গ্রামের মধ্যে উত্তেজনা এখনো চলমান। নয়নের ওপর হামলার পর বিষয়টি নতুন করে সামনে আসছে।

হোসেনপুর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, হামলার কারণ জানা জরুরি। প্রথমে কারণ বের করার চেষ্টা চলছে। এরই মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কটিয়াদী ও পাকুন্দিয়া উপজেলা নিয়ে সংসদীয় আসন কিশোরগঞ্জ-২। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) নূর মোহাম্মদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নূর মোহাম্মদ চেয়েও দলীয় মনোনয়ন পাননি। নৌকা পান বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাবেক অতিরিক্ত ডিআইজি আবদুল কাহার আকন্দ। কিন্তু তিনি নির্বাচনে জয়ী হতে পারেননি। জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য মো. সোহরাব উদ্দিন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জানান, কটিয়াদী আওয়ামী লীগ একাধিক ধারায় বিভক্ত। নয়ন ছিলেন নূর মোহাম্মদের বলয়ের। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর নূর মোহাম্মদ দলের কিংবা দলটির দুই প্রার্থীর কারও পক্ষে না থেকে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত নেতা মেজর (অব.) আখতারুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার চালান। নয়নও প্রকাশ্যে নির্বাচন করেন আখতারুজ্জামানের। এই ইস্যুতে উভয় প্রার্থীর সমর্থকেরা নয়নের প্রতি নাখোশ ছিলেন। নির্বাচনের পরে নয়ন রাজনৈতিক সমর্থন হারান। অনেকের ধারণা, নয়নের বড় ধরনের ক্ষতি করার জন্য হামলাকারীরা এই সময়টাকে কাজে লাগিয়েছে। কারণ, মামলার এজাহারে ফুটবল খেলা নিয়ে দুই গ্রামের বিরোধকে সামনে আনা হয়েছে। আবার বেশির ভাগ আসামিও করা হয়েছে রায়খলা গ্রামের বাসিন্দাদের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নয়নের ওপর হামলার পর এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কিংবা স্বেচ্ছাসেবক লীগের পক্ষ থেকে প্রকাশ্য প্রতিক্রিয়া নেই। দেওয়া হয়নি প্রতিবাদ কর্মসূচি। উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম বলেন, ‘হামলার কারণ জানার চেষ্টা করছি। কারণটা জানা গেলে কর্মসূচির ধরন ঠিক করা যেত।’

দেড় বছর আগে দুই গ্রামের বিরোধ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কামাল আহমেদ বলেন, দুই গ্রামের অনেক সমস্যা। দুই গ্রামের বিরোধ কমাতে না পারলে সামনে হয়তো আরও বর্বরোচিত ঘটনা দেখতে হতে পারে।

আরও পড়ুন