মায়ার বাঁধনে পড়েছে বাজপাখিটি

বাজপাখি হাতে রোমান ছৈয়াল। সম্প্রতি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়মুলনা গ্রামেছবি: প্রথম আলো

অসুস্থ অবস্থায় ফসলি জমিতে পড়ে ছিল বাজপাখিটি। এটিকে উদ্ধার করে সেবা-শুশ্রূষা করেন রোমান ছৈয়াল। এক মাস পর পুরোপুরি সুস্থ হয় পাখিটি। কয়েক দফা এটি অবমুক্ত করার চেষ্টাও করা হয়েছে। তবে বাজপাখিটি রোমান ছৈয়ালের বাড়িতে ফিরে এসেছে। ১৫ মাস ধরে ওই পরিবারের সঙ্গেই থাকছে পাখিটি। বর্তমানে পাখিটি দিনের বেলায় খোলা জায়গায় এবং রাতে ঘরে থাকে।

রোমান ছৈয়াল শরীয়তপুরের জাজিরার বড়মুলনা গ্রামের কৃষক মজিবুর রহমান ছৈয়ালের ছেলে। তিনি জাজিরা কলেজের স্নাতক (অনার্স) শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী এবং কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি বাড়ির কৃষিকাজ দেখাশোনা করেন।

ছোটবেলা থেকেই রোমান পশুপাখি ভালোবাসেন। অসুস্থ পশুপাখি উদ্ধার করে সেবা-শুশ্রূষাও করেন। গত বছর ৯ জানুয়ারি সন্ধ্যার দিকে বড়মুলনা গ্রামের ফসলি জমিতে একটি বাজপাখি অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিল। বিষয়টি রোমানের মামা তোতা মাতবরের নজরে পড়ে। তিনি রোমানকে খবর দেন। তিনি পাখিটিকে উদ্ধার করেন এবং দেখেন এর ডান পায়ের নখ উপড়ে রক্ত বের হচ্ছে। ওই রাতেই পাখিটিকে নিয়ে যান উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে। সেখানে চিকিৎসা শেষে পাখিটিকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। এক মাস ধরে পাখিটির চিকিৎসা চলে।

ইতিমধ্যে পাখিটির সঙ্গে রোমানের সখ্য গড়ে ওঠে। পরিবারের অন্য সদস্যরাও পাখিটিকে আদর-যত্ন করেন ও খাবার দেন। এমন ভালোবাসা পেয়ে বাজপাখিটি আর ওই বাড়ি থেকে যেতে চায়নি। গত ১৫ মাসে কয়েক দফা পাখিটিকে অন্য কোনো বাগান ও ফসলের মাঠে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আবারও রোমানদের বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়েছে। ইতিমধ্যে ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাজপাখির খাদ্যাভ্যাস ও লালন-পালন সম্পর্কে তাঁরা জানতে পেরেছেন।

আরও পড়ুন
১৫ মাস ধরে বাজপাখিটি রোমান ছৈয়ালের বাড়িতে রয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

রোমান ছৈয়াল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ছোটবেলা থেকে পশুপাখির প্রতি দুর্বল। কিন্তু কখনো কোনো পাখিকে পোষ মানিয়ে নিজের কাছে রাখার চেষ্টা করিনি। বাজপাখিটি এভাবে আমার কাছে থেকে যাবে, তা ভাবতেও পারিনি। ৩-৪ মাস আগে শীতের সময় হঠাৎ পাখিটি খুঁজে পাচ্ছিলাম না। খুব মন খারাপ হয়েছিল। তিন দিন পর দেখি পাখিটি আবার বাড়িতে এসেছে। ওর প্রতি ভালোবাস ও মায়া জন্মে গেছে। বাড়ির বাইরে কোথায় গেলেও বারবার ফোন করে পাখিটির খবর নিই।’

রোমান যখন কাজে ব্যস্ত থাকেন, তখন পাখিটিকে দেখাশোনা করেন তাঁর মা হোসনে আরা বেগম ও ছোট ভাই সাইম ছৈয়াল। হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘রোমান ইউটিউবে ভিডিও দেখে বাজপাখির খাদ্যাভ্যাস ও লালন-পালন সম্পর্কে জেনেছে। বাজার থেকে ছোট মাছ কিনে দিনে তিন থেকে চারবার পাখিটিকে খেতে দেওয়া হয়। এখন পাখিটি দেখতে লোকজন বাড়িতে ভিড় করেন। তবে পাখিটির যাতে কেউ কোনো ক্ষতি করতে না পারেন, সেদিকে আমরা নজর রাখি। দিনে খোলা জায়গায় পাখিটি উন্মুক্ত রাখা হয়। কখনো আশপাশে উড়ে গেলে আবার ফিরে আসে। রাতে পাখিটিকে রোমানের ঘরেই থাকে।’

আরও পড়ুন

বাজপাখি মূলত এর তীক্ষ্ণ দৃষ্টির জন্য খ্যাত। এরা ধারালো ঠোঁট ও তীক্ষ্ণ নখের অধিকারী। ঠোঁট অন্য পাখিদের মতো খোলা প্রান্তর থেকে শস্যদানা খুঁটে খুঁটে খাওয়ার জন্য নয়। মূলত ছোট ছোট প্রাণীর শরীর থেকে মাংসপিণ্ড ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাওয়ার জন্য বিশেষভাবে তৈরি এদের ঠোঁট।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহাগ বলেন, ‘বাজপাখি একধরনের শিকারি পাখি। দেশে এ পাখি সচরাচর দেখা যায় না। ওই তরুণ (রোমান) পাখিটিকে পোষ মানিয়েছেন। পাখিটি পূর্ণ বয়স্ক। পাখিটির অসুস্থতা বা কোনো সমস্যা দেখা দিলে আমাদের কাছে নিয়ে আসেন। আমরাও ভালোভাবে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি।’