অতিরিক্ত গতি ও চালকের ঘুম ঘুম ভাবে ফরিদপুরের দুর্ঘটনা

ফরিদপুরে বাসের সঙ্গে মঙ্গলবার পিকআপের সংঘর্ষ হয়। পরে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি দুটি সরিয়ে নেওয়া হয়ফাইল ছবি: প্রথম আলো

ফরিদপুর সদর উপজেলায় পিকআপ-বাসের সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসকের কাছে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি। অতিরিক্ত গতি, বাসচালকের ঘুম ঘুম ভাব, বাসের সামনে ইজিবাইক ও মধ্যরেখা অতিক্রম করায় ঘটে মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে কমিটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে।

সাত সদস্যের এই তদন্ত কমিটির সভাপতি ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাস ও পিকআপ দুটিই অতিরিক্ত গতিসম্পন্ন ছিল। উভয় যানই সড়কের মধ্যরেখা অতিক্রম করেছে। এর মধ্যে বাস কম এবং পিকআপ সড়কের মধ্যরেখা বেশি লঙ্ঘন করেছে।

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, বাসটি ঢাকা থেকে আসছিল। টানা দীর্ঘপথ পাড়ি দেওয়ায় চালক ক্লান্ত ছিলেন। চালকের চোখে ঘুম ছিল। বাসের সামনে একটি ইজিবাইক ছিল। ইজিবাইককে পাশ কাটাতে গিয়ে বাসটি মধ্যরেখা অতিক্রম করে কিছুটা আড়াআড়ি হয়ে যায়। ওই সময় সামনের দিক থেকে দ্রুতগতির পিকআপটি বাসের সামনের দিকে আঘাত করলে এই দুর্ঘটনা ঘটে।

আরও পড়ুন

তদন্ত কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী এই প্রতিবেদনকে ‘প্রাথমিক’ হিসেবে মন্তব্য করে বলেন, ‘আমরা ওই বাসচালকের পরিবারের সঙ্গে কথা বলব। তিনি মানসিকভাবে কেমন ছিলেন, পারিবারিক কোনো সমস্যা ছিল কি না, একটানা কয় দিন বাস চালাচ্ছিলেন—এ বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করব।’

তদন্ত কমিটিতে মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী ছাড়াও সদস্য হিসেবে ছিলেন বুয়েটের প্রতিনিধি আরমানা সাবিহা হক, ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সালাহউদ্দীন, হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইমরান সুমেল, বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো. এমরান খান ও ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান।

ক্লান্ত চালক আধো ঘুমে ছিলেন: র‍্যাব

বাস-পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৫ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় বাসচালক মো. খোকন মিয়াকে (৫৪) গতকাল রোববার দুপুরে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুরের একটি আবাসিক হোটেল থেকে আটক করে র‍্যাব। এরপর আজ সোমবার দুপুরে ফরিদপুর র‍্যাব ক্যাম্পে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বর্ণনা দেন র‍্যাব-১০ ফরিদপুরের কোম্পানি কমান্ডার কে এম শাইখ আকতার।

আটক বাসচালকের বরাত দিয়ে র‍্যাব কর্মকর্তা কে এম শাইখ আকতার বলেন, ১৫ এপ্রিল রাত নয়টার দিকে চুয়াডাঙ্গার জীবননগর থেকে বাসের ট্রিপ নিয়ে ঢাকার গাবতলীর উদ্দেশে রওনা দেন উত্তরা ইউনিক পরিবহনের চালক খোকন মিয়া। তিনি রাত তিনটার দিকে গাবতলী পৌঁছান। এক ঘণ্টার খাবার বিরতি দিয়ে ১৬ এপ্রিল ভোর চারটার দিকে তিনি আবার বাসের ট্রিপ নিয়ে জীবননগরের উদ্দেশে রওনা দেন। এর ফলে তাঁর বিশ্রাম নেওয়ার কোনো সময় ছিল না। রাতে তিনি ঘুমাতে পারেননি। এ কারণে তিনি আধো ঘুম অবস্থায় ছিলেন। ফলে বাস চালাতে সাবধানতা অবলম্বন করতে পারেননি চালক।

আরও পড়ুন

হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার মো. শাহীনুর আলম খান আজ দুপুর পৌনে একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, গাড়িচালককে র‍্যাব আটক করেছে, তা জানতে পেরেছেন তিনি। তবে চালককে এখনো হাইওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি। হাইওয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার পর চালককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

১৬ এপ্রিল সকালে একটি পিকআপে করে নারী ও শিশুসহ ১৬ জন আলফাডাঙ্গা থেকে ফরিদপুর যাচ্ছিলেন। সকাল পৌনে আটটার দিকে পিকআপটি যাত্রী নিয়ে ফরিদপুর সদরের কানাইপুর দিগনগর এলাকায় পৌঁছালে মাগুরাগামী উত্তরা ইউনিক পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে এটির সংঘর্ষ হয়। এতে পিকআপের ১৫ জন যাত্রী নিহত হন।