মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার ঘোষণা অভিযুক্ত প্রার্থীর

সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল হাবীব
ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীকে অপহরণ করার অভিযোগ ওঠার পর আরেক প্রার্থী লুৎফুল হাবীব মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করার ঘোষণা দিয়েছেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে পাঠানো এক ভিডিও বার্তার তিনি এই ঘোষণা দেন।

আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে নাটোরের কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীর কাছে ওই ভিডিও পাঠান লুৎফুল হাবীব। এ বিষয়ে জানতে লুৎফুল হাবীবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল লতিফ শেখ দুপুর ১২টায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনারা যেমনটি শুনছেন, আমিও তেমনটি শুনেছি। কিন্তু মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করতে হলে আমার (রিটার্নিং কর্মকর্তা) কাছেই আবেদন করতে হবে। প্রার্থী নিজে বা তাঁর মনোনিত ব্যক্তিকে আবেদন করতে হবে। এমনটি ঘটেনি। প্রার্থীর একজন সহযোগী শুধু সিংড়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে ফোন করে এ ধরনের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু আবেদনপত্র না পাওয়া পর্যন্ত প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চিত করা যাবে না।’

আরও পড়ুন

লুৎফুল হাবীব ওই ভিডিওতে বলেছেন, ‘উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ৩ এপ্রিল ওই পদ থেকে পদত্যাগ করি। মনোনয়পত্র দাখিল করার পর থেকে এলাকায় অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যা থেকে আমি বুঝতে পারছি, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। একটি মহল এ ষড়যন্ত্রে সক্রিয় হয়েছে।’ তিনি জানান, এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এর আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছেন।

আরও পড়ুন

গত সোমবার বিকেলে নাটোর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের ভেতর থেকে দুর্বৃত্তরা সিংড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে মারধর করতে করতে একটি কালো মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এর পাঁচ ঘণ্টা আগে তাঁর ভাইসহ এক আওয়ামী লীগ নেতাকে একই এলাকা থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে বিকেল পাঁচটার কিছু পরে দুর্বৃত্তরা মুমূর্ষু অবস্থায় প্রার্থী দেলোয়ারকে গ্রামের বাড়ির (সিংড়ার কলম ইউনিয়নের পারসাঐল গ্রাম) সামনে ফেলে রেখে যায়। বর্তমানে তিনি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

ওই দিন রাতে তাঁর ভাই মুজিবর রহমান বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেন। এ পর্যন্ত পুলিশ দুই দফায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পরের দিন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়া সুমন আহমেদ আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি প্রতিপক্ষ প্রার্থী লুৎফুল হাবীবের পক্ষ নিয়ে দেলোয়ার হোসেনকে অপহরণের কথা স্বীকার করেন। এ সময় তিনি ঘটনার সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন

অভিযুক্ত লুৎফুল হাবীব উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদের শ্যালক। তিনি উপজেলার শেরকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ ছেড়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন করছেন। প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে এখানে ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ এপ্রিল (কাল সোমবার)।

অপহরণের ঘটনায় লুৎফুল হাবীবকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে উপজেলা আওয়ামী লীগ। শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলা আওয়ামী লীগের জরুরি বর্ধিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। একই সঙ্গে অপহরণের ঘটনায় জড়িত দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।