বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদের আসার সুযোগ চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

মাওলানা সাদকে ইজতেমায় আনার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ইজতেমা মাঠের মূল ফটকের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদ কান্ধলভীকে আসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে ‘সাধারণ মুসল্লি পরিষদ’-এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। আজ বুধবার সকালে সাদের অনুসারীরা এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগতীরে আগামী শুক্রবার থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব।

সংবাদ সম্মেলনে মাওলানা সাদের ভিসা নিশ্চিতের করতে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও মাওলানা সাদের বিষয়ে সরকারের ওপরের মহল থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি তাঁরা। ফলে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন

সন্ধ্যা সাতটার দিকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাধারণ মুসল্লি পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুয়াজ বিন নূর প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাওলানা সাদ কান্ধলভী ইজতেমায় আসুক, এটা আমাদের প্রাণের দাবি। আমরা আজ সন্ধ্যার মধ্যে সাদ সাহেবের ভিসা নিশ্চিতের জন্য সরকারকে সময় বেঁধে দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার এ বিষয়ে আমাদের এখনো কিছুই জানায়নি। তাই আগামীকাল সকালে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব। তবে কৌশলগত কারণে এ বিষয়ে এখনই বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।’

বেলা ১১টার দিকে ইজতেমা মাঠের ১ নম্বর ফটকে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখান কথা বলেন মুয়াজ বিন নূর। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দ্বিতীয় পর্ব ইজতেমা আয়োজনের মিডিয়া সমন্বয়ক মো. সায়েম, মুফতি আজিম উদ্দিন, মুফতি মিজানুর রহমান প্রমুখ।

সংবাদ সম্মেলনে মুয়াজ বিন নূর বলেন, ‘বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে গত ১৫ নভেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আমাদের তাবলিগের দুই পক্ষকে নিয়ে বৈঠক হয়। সেখানে আমরা এবার প্রথম পর্বে ইজতেমা করার দাবি জানাই। কিন্তু অপর পক্ষ (মাওলানা জুবায়ের অনুসারী) কোনোভাবেই আমাদের প্রথম পর্বে ইজতেমা করার সুযোগ দিচ্ছিলেন না। পরে একপর্যায়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (আসাদুজ্জামান খান) এবার ইজতেমায় সাদ কান্ধলভীকে এনে দেওয়ার আশ্বাসসহ আরও দুটি দাবি মেনে নিয়ে আমাদের দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা করার অনুরোধ করেন। আমরা তখন মন্ত্রী মহোদয়ের কথায় আশ্বস্ত হয়ে দ্বিতীয় পর্বে ইজতেমা করতে রাজি হই। কিন্তু এখন তিনি আমাদের আশ্চর্যজনকভাবে হতাশ করেছেন। মাওলানা সাদ আসার বিষয়ে কিছুই বলছেন না।’

তাবলিগ জামাতের বিবদমান বিরোধের কারণে কয়েক বছরের মতো এবারও বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হচ্ছে আলাদাভাবে। গত রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হয়েছে তাবলিগের প্রথম পক্ষ বা মাওলানা জুবায়ের অনুসারীদের ইজতেমা। শুক্রবার শুরু হবে দ্বিতীয় পক্ষ বা মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের ইজতেমা। এ উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে সাদ অনুসারীদের কাছে মাঠ বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। মাঠ বুঝে পেয়ে প্রস্তুতির কাজ শুরু করেছেন সাদের অনুসারীরা। এরই মধ্যে মুসল্লিরা মাঠে প্রবেশ শুরু করেছেন।

সন্ধ্যার মধ্যে মাওলানা সাদের ভিসা নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে মুয়াজ বিন নূর বলেছিলেন, ‘গত বছর আমাদের ইজতেমায় বিদশিদের সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি। আর এবারের ইজতেমায় এখন পর্যন্ত উপস্থিত হয়েছেন মাত্র আড়াই হাজার। এখনো ১০ হাজার বিদেশি মেহমান ইনভাইটেশন লেটার নিয়ে বসে আছেন। সাদ সাহেবের আসা নিশ্চিত হওয়ামাত্র তাঁরা টিকিট কেটে চলে আসবেন। আর সাদ সাহেদ যদি না আসেন, তবে তাঁরা ইজতেমায় শরিক হবেন না বা এখন যাঁরা আছেন, তাঁরাও যদি সাদ সাহেবের বিষয়ে ধোঁকা খান, তবে তাঁরাও আগামী বছর আসবেন কি না সন্দেহ।’

দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায় দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা উপলক্ষে এরই মধ্যে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠে আসা শুরু করেছেন। কেউ বাস, কেউ ট্রাক, কেউবা পিকআপ ভ্যান থেকে এসে নামছেন ইজতেমা মাঠের আশপাশের সড়কে। এরপর দলে দলে প্রবেশ করছেন ইজতেমা মাঠে। মাঠে প্রবেশ করে অবস্থান করছেন নিজ নিজ খিত্তায়। এর মাঝেই কোথাও কোথাও চলছে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমা আয়োজনের মিডিয়া সমন্বয়ক মো.সায়েম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সবার চাওয়া মাওলানা সাদ সাহেব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করুক। এ কারণে আজ আমাদের সাধারণ মুসল্লিরা একমত হয়ে মাওলানা সাদ সাহেবকে দেশে আনার দাবি জানিয়েছেন।’

যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘দ্বিতীয় পক্ষ বা মাওলানা সাদ অনুসারীদের কোনো নেতার উদ্যোগে এটা হয়নি বা তাঁরা আমাদের এ বিষয়ে কিছু বলেনি। সাধারণ মুসল্লি পরিষদের ব্যানারে কে বা কারা এটা করেছে, সেটা আমাদের জানা নেই। মাওলানা সাদ সাহেবের বিষয়টা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের কাজ। এখানে তাঁরা (মুসল্লিরা) আসছেন ইজতেমা করতে। এখানে কোনো ধরনের আন্দোলন, আলটিমেটাম, কর্মসূচি বা হুঁশিয়ারি দেওয়ার জায়গা না। যদি তাঁরা এটা করেন, তবে তাঁরা ভুল করবেন।’