পুকুর-দিঘি সুরক্ষার দাবি জানিয়ে রাজশাহীতে ‘পানিবন্ধন’

বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে কর্মসূচির আয়োজন করে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও বারসিক নামে দুইটি সংগঠন। আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টেছবি: প্রথম আলো

সাদা কাপড়ের ব্যানারে রাজশাহী শহরের ধ্বংস হয়ে যাওয়া পুকুর ও দিঘির নাম। রয়েছে দখল হতে চলা পুকুর-দিঘির তালিকাও। সবই হাতে লেখা, রয়েছে হাতের ছাপও। ব্যানারের পাশাপাশি প্ল্যাকার্ডেও পুকুর, দিঘি, জলাশয় রক্ষার আকুতি। যাঁরা এসব দাবি জানাচ্ছেন, তাঁদের বেশির ভাগই তরুণ।

আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরের সাহেব বাজার জিরো পয়েন্টে বরেন্দ্র অঞ্চলের জল ও জীবনের নিরাপত্তায় ভূ-উপরিস্থ জলাধারগুলো সুরক্ষার দাবিতে কর্মসূচি পালন করেন একদল তরুণ। এই কর্মসূচিকে তাঁরা নাম দিয়েছেন ‘পানিবন্ধন’। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে এই কর্মসূচির আয়োজন করে বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) নামের দুটি সংগঠন। প্রতি বছর ২২ মার্চ দিবসটি পালিত হয়।

বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সভাপতি শাইখ তাসনীমের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য দেন বীর রাজশাহী জেলা আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস, বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোসাইটি চেঞ্জের সভাপতি সামিউল আলীম, সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, ভয়েস অব ইয়ুথের সভাপতি মাহফুজুর রহমান, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম মুক্তিযুদ্ধ-৭১-এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল।

কর্মসূচির শেষ দিকে বরেন্দ্র অঞ্চলের পানির দাবি নিয়ে আটটি দাবির কথা মানববন্ধনে পড়ে শোনান শাইখ তাসনীম। এ সময় সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী। কর্মসূচি শেষে তরুণেরা রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে এসব দাবিসংবলিত স্মারকলিপি দেন।

তরুণদের প্রদর্শিত প্ল্যাকার্ডে বলা হয়েছে, ‘পানির ন্যায্য অধিকার চাই’, ‘নদী-খাল খনন করে বরেন্দ্রভূমিকে রক্ষা কর’, ‘শুকনা দিঘি ভরাট বন্ধ কর’, ‘বরেন্দ্র জনতা, গড়ে তোলো একতা’, ‘বিলসিমলা বিল কোথায় গেল’, ‘মঠপুকুর সুরক্ষা কর’, ‘শুকান দিঘি সুরক্ষা ও রক্ষা কর’, ‘সোনাদীঘি আর কত ছোট হবে’, ‘জলাধার দখল-দূষণ বন্ধ কর’, ‘পুকুর ভরাট বন্ধ কর’ প্রভৃতি।

মানববন্ধনে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী স্মৃতিচারণা করে রাজশাহী নগরের বিভিন্ন পুকুর ও দিঘির বর্ণনা দেন। কোন পুকুর কীভাবে ভরাট হয়ে কী করা হয়েছে, তার বর্ণনা উঠে আসে তাঁর বক্তব্যে। তিনি বলেন, এরশাদের আমল থেকে রাজশাহীতে পুকুর-দিঘি ভরাট শুরু হয়েছে। রাজশাহী নগরের সবচেয়ে বড় বিপণিবিতান আরডিএ মার্কেটের নিচে একটি বিশাল পুকুর ছিল। এটি সরকারিভাবে ভরাট করা হয়েছে। ৯৫২টি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। রাজশাহীতে এখনো যে কয়টি পুকুর-দিঘি আছে, তা রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে পদ্মার অববাহিকা ঠিক রেখে পানির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
ভয়েস অব ইয়ুথের সভাপতি মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘পানিবন্ধন কী, আমাদের জানতে হবে। আমাদের দাবি পানি নিয়ে। মানুষের মৌলিক অধিকারের ভেতরে অন্যতম পানি; যেটা সৃষ্টিকর্তার অন্যতম নিয়ামত। এটি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। যেভাবে আমরা গাছপালা লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করছি, ঠিক একই কারণে পানি রক্ষা করতে হবে।’

আরও পড়ুন

ইয়ুথ অ্যাকশন ফর সোসাইটি চেঞ্জের সভাপতি সামিউল আলীম বলেন, ‘রাজশাহীকে একসময় বলা হতো পুকুরের নগরী। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি শুধু রাজশাহী নয়, পুরো বরেন্দ্র অঞ্চলে যে পুকুর-জলাশয়গুলো ছিল, সেগুলো ভরাট করা হয়েছে। জলাধার ভরাট করে প্রভাবশালীরা বহুতল ভবন নির্মাণ করছেন। রাতের আঁধারে রাজশাহী শহরের পুকুরগুলো ভরাট করা হচ্ছে। ফলে রাজশাহীর পরিবেশ হুমকির মুখে। রাজশাহীতে পানির সুপেয় ব্যবস্থার সংকট হচ্ছে। এই শহরে যেসব পুকুর ছিল, তা সংরক্ষণ করতে হবে। দিনে-রাতে যেভাবে যারা পুকুর ভরাট করেছে, তা দখলমুক্ত করতে হবে। দখলদারীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে।’

কর্মসূচিতে ‘পানি অধিকার নিশ্চিত কর’, ‘নদী-খাল খনন করে বরেন্দ্রভূমিকে রক্ষা কর’, ‘শুকনা দিঘি ভরাট বন্ধ কর’– লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করা হয়েছে
ছবি: প্রথম আলো

রাজশাহী জেলা আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস বলেন, ‘রাজশাহীতে যেসব জীববৈচিত্র্য ছিল, তা দিনে দিনে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একসময় রাজশাহী অঞ্চলে অনেক পাখি আসত, এখন আসে না। পুকুর-দিঘিগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য নেই। গোদাগাড়ীতে আদিবাসীরা কৃষিকাজে পানি পাচ্ছেন না। প্রাকৃতিক জলাধারকে সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। রাজশাহী অঞ্চলের উন্নয়নে এখানকার মানুষকে সম্পৃক্ত করে তাঁদের মতামত নিতে হবে। উন্নয়ন করে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা যাবে না। রাজশাহীর সোনাদীঘিকে সংকুচিত করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে অনেক বড় গাছ ধ্বংস করা হয়েছে।’

রাজশাহী জেলা আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি উপেন রবিদাস বলেন, ‘রাজশাহীতে যেসব জীববৈচিত্র্য ছিল, তা দিনে দিনে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। একসময় রাজশাহী অঞ্চলে অনেক পাখি আসত, এখন আসে না। পুকুর-দিঘিগুলো দখল হয়ে যাওয়ায় জীববৈচিত্র্য নেই। গোদাগাড়ীতে আদিবাসীরা কৃষিকাজে পানি পাচ্ছেন না। প্রাকৃতিক জলাধারকে সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে। রাজশাহী অঞ্চলের উন্নয়নে এখানকার মানুষকে সম্পৃক্ত করে তাঁদের মতামত নিতে হবে। উন্নয়ন করে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা যাবে না। রাজশাহীর সোনাদীঘিকে সংকুচিত করা হয়েছে। উন্নয়নের নামে অনেক বড় গাছ ধ্বংস করা হয়েছে।’

আরও পড়ুন