বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যার আগে স্বামীকে অচেতন করেছিলেন সুরমা

হত্যা রহস্য উদ্‌ঘাটনের পর বেগমগঞ্জ থানার সামনে পুলিশের সংবাদ সম্মেলন। গতকাল বিকেলে
ছবি: প্রথম আলো

প্রেমিকের সঙ্গে পরামর্শ করে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে অচেতন করেছেন স্বামী আবদুল কুদ্দুসকে (৫১)। এরপর বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করেছেন তাঁকে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নোয়াখালীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এমন তথ্য দিয়েছেন ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার কুদ্দুসের স্ত্রী সুরমা আক্তার (৪০) ও তাঁর প্রেমিক মো. ইসমাইল (৩৫)। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার পর দুই আসামিকে কারাগারে পাঠান আদালত।

এর আগে গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের রফিকপুর গ্রামের বাড়ি থেকে আবদুল কুদ্দুসের লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় নিহত ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুসের ভাতিজা আরিফ হোসেন গতকাল বিকেলে বেগমগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন বলে জানান বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম। ওই মামলায় কুদ্দুসের স্ত্রী সুরমা আক্তার ও তাঁর বন্ধু মো. ইসমাইলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

গতকাল সন্ধ্যায় বেগমগঞ্জ মডেল থানার সামনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান, বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে তাঁরা ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুসকে বসতঘরে অজ্ঞাতনামা দুর্বৃত্তরা হত্যা করে পালিয়ে গেছে—এমন তথ্য পান। রাতেই থানা-পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত কুদ্দুসের স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে। তখন তাঁর কথাবার্তা অসংলগ্ন মনে হয়েছিল। যার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে থানায় নিয়ে আসা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে জানা যায়, আবদুল কুদ্দুসের গ্রামের বাড়িতে পাকা ভবনের কাজ করার সময় তাঁর স্ত্রী সুরমা আক্তারের সঙ্গে টাইলস মিস্ত্রি মো. ইসমাইলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যার সুবাদে দুজনের মধ্যে প্রায় সময় যোগাযোগ হতো। এরই মধ্যে ইসমাইল সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যান। বিদেশে থাকা অবস্থায় তাদের দুজনের কথাবার্তা হতো মুঠোফোনে। সুরমা আক্তারের সংসারে তিন ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তাঁর ছোট ছেলের বয়স ১৫ মাস।

আরও পড়ুন

সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, জিজ্ঞাসাবাদে সুরমা পুলিশকে জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর তাঁরা ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি আসেন। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী, তাঁরা ঘরে ঢোকার পর কৌশলে পাকা ভবনের ছাদে উঠে লুকিয়ে থাকেন ইসমাইল। চলতি মাসের ৬ তারিখে তিনি বিদেশ থেকে দেশে আসেন। কিন্তু তিনি বিষয়টি পরিবারের কাছে গোপন রাখেন। দেশে এসে ইসমাইল সেনবাগ উপজেলায় তাঁর খালার বাড়িতে উঠেছিলেন।
সুরমা ও ইসমাইলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, রাতের খাবারের সঙ্গে সুরমার স্বামী কুদ্দুসকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ানো হয়। খাবার খেয়ে কুদ্দুস ঘুমিয়ে পড়েন। এরপর সুরমা তাঁকে ছাদ থেকে ডেকে এনে পরিকল্পনা অনুযায়ী বৈদ্যুতিক তার দিয়ে ঘুমন্ত কুদ্দুসকে শক দেন। এতে তিনি মারা যান। এরপর ইসমাইল সুরমাকে একটি কক্ষে আটকে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে সুরমা চিৎকার-চেঁচামেচি করে বাড়িতে ডাকাত ঢোকার কাহিনি প্রচার করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিজয়া সেন উল্লেখ করেন, সুরমার কাছ থেকে এমন তথ্য পাওয়ার পর গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে সেনবাগ এলাকা থেকে ইসমাইলকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ইসমাইলও ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। ইসমাইল বলেন, গত বুধবার চট্টগ্রাম গিয়ে আরব আমিরাত পালিয়ে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিটও কাটেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর বিমানে ওঠার কথা ছিল। গ্রেপ্তারের সময় তাঁর পাসপোর্ট ও বিমানের টিকিট জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত বৈদ্যুতিক তারসংবলিত মাল্টিপ্লাগ জব্দ করা হয়েছে।