চাকরি ফেরত চান প্রতারণার শিকার মঈন উদ্দিন

মঈন উদ্দিন খান
ছবি: সংগৃহীত

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার মঈন উদ্দিন খানের নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় দুই যুগ কারারক্ষীর চাকরি করেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার তাজুল ইসলাম। সম্প্রতি র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তাজুল। এখন প্রতারণার শিকার মঈন উদ্দিন খান তাঁর চাকরি ফেরত চান।

মঈন উদ্দিন খান প্রথম আলোকে বলেন বলেন, ‘আমার নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অন্য মানুষ দুই যুগ চাকরি করেছে তার প্রমাণ মিলেছে। সরকারের কাছে প্রমাণ আছে। তাহলে আমি কেন ওই চাকরি থেকে বঞ্চিত হবো। আমি আমার ১৬ আনা প্রাপ্য পেয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে চাই।’ তিনি বলেন, উচ্চ আদালত তাঁকে চাকরিতে বহাল করার জন্য দুবার আদেশ দিয়েছেন। কিন্তু বিষয়টির সুরাহা করছে না কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন

হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর গ্রামের বাসিন্দা নুরু উদ্দিন খানের ছেলে মঈন উদ্দিন ও কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার শশীদল ইউনিয়নের দক্ষিণ শশীদল গ্রামের তাজুল ইসলাম ২০০১ সালে একসঙ্গে কারারক্ষী পদে চাকরির আবেদন করেছিলেন। তাজুল পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হন। তবে মঈন কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে শারীরিক ফিটনেস, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। বলা হয়েছিল, যাঁরা চাকরিতে টিকবেন, তাঁদের স্থায়ী ঠিকানায় নিয়োগপত্র পাঠানো হবে। তাজুল তখন জালিয়াতির মাধ্যমে মঈন উদ্দিনের নাম ব্যবহার করে ২২ বছর চাকরি করেন। সম্প্রতি তাজুলের জালিয়াতি ধরা পড়ে।

মঈন উদ্দিন খান বলেন, ‘আমি প্রতারণার শিকার না হলে আজ আমার জীবন অন্য রকম হতো। এখন কষ্ট করে জীবন যাপন করছি। মাধবপুর উপজেলার মনতলা বাজারে একটি ফার্মেসির দোকান আছে। দুই সন্তানের পড়াশোনা ও সংসারের সব খরচ ওই দোকান থেকে জোগান দিতে হয়।’ তিনি বলেন, তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে তাজুলের চাকরি করার বিষয়টি তিনি ২০১৫ সালে জানতে পারেন। ২০১৫ সালে জাতীয় বেতন স্কেল অনুযায়ী, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) দরকার হয়। তখন তাজুল তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে একটি ভুয়া এনআইডি কার্ড তৈরি করেন।

মঈন উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি জানার পর তিনি চাকরির জন্য কারা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেন। একপর্যায়ে চাকরি না পেয়ে তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। এরপর কারা কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করে। ২০২১ সালের ২০ নভেম্বর তাজুলকে তদন্ত কমিটি ডাকলেও হাজির হননি তাজুল। প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে চাকরি করার অভিযোগে গত বছরের ৪ আগস্ট সিলেটের জালালাবাদ থানায় মামলা করে কারা কর্তৃপক্ষ।

মঈন উদ্দিন আরও বলেন, বিষয়টির সুরাহার জন্য তিনি উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। এরপর গত বছরের ১ মার্চ এক আদেশে চার সপ্তাহের মধ্যে বিষয়টি বিবেচনার জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কিছুই করেনি। পরে পুনরায় আদালতের শরণাপন্ন হলে একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালত চার সপ্তাহের মধ্যে অগ্রগতি জানাতে বলেন। তখন কারা কর্তৃপক্ষ এক চিঠিতে আদালতকে জানায়, তারা তদন্ত করে এ ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। মূলত চাকরি পান মঈন উদ্দিন খান। কিন্তু তাজুল তাঁর নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে চাকরি নিয়েছেন। কিন্তু বিধি অনুয়ায়ী তারা এখন মঈন উদ্দিনের জন্য কিছুই করতে পারছে না।

প্রতারণার মাধ্যমে ২২ বছর কারারক্ষীর চাকরি করা তাজুল ইসলাম। শুক্রবার বেলা ১১টায় কুমিল্লা নগরের শাকতলা র‌্যাব কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

মঈন উদ্দিন খান বলেন, ‘আমি প্রতারণার শিকার তা সরকারের কাছে স্পষ্ট। তাহলে আমার চাকরিতে ফিরতে এত আইনি বাধা কেন? আমার সন্তানেরা দেখতে চায়, তাদের বাবা একজন সরকারি চাকরিজীবী।’

এদিকে ২০২০ সালে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর ছড়িয়ে পড়ে, সিলেট বিভাগে ২০০ জন কারারক্ষী বেআইনিভাবে কাজ করছেন। সিলেটের ওই ২০০ জনের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হয়। তখন তাজুলের তথ্য যাচাই করতে গিয়ে ঘটনাটি সামনে আসে। একপর্যায়ে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের উপমহাপরিদর্শক মাধবপুর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের কাছে একটি চিঠি দেন। এতে কারারক্ষী মঈন উদ্দিন খান সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা কি না, তা জানতে চান।

ইউপি চেয়ারম্যান জবাবে জানান, মঈন উদ্দিন খান কারারক্ষী নন। তিনি তাঁদের এলাকার ছেলে, ওষুধ ব্যবসায়ী। কারা কর্তৃপক্ষের এসব তৎপরতা জানতে পেরে তাজুল ২০২১ সালের ১৫-২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছুটি নেন। এরপর তিনি আর যোগদান করেননি। পরে কারা কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে র‍্যাবের সহযোগিতা চায়।

১২ জানুয়ারি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে তাজুলের অবস্থান শনাক্ত করে কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া বাজার থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। গত বৃহস্পতিবার বিকেলে র‍্যাব-১১ ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-২ কুমিল্লার সদস্যরা তাজুলকে ব্রাহ্মণপাড়া বাজার থেকে গ্রেপ্তার করেন।