দুই বছর ধরে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য, জানত না পুলিশ

নোয়াখালীতে কিশোর গ্যাংয়ের এক পক্ষের হামলায় নিহত তরুণ মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাওনছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলায় দুই বছর ধরে ‘এফ-টেন’ নামের একটি কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য চলছে। উপজেলার সেবারহাটের স্কুল, বিপণিবিতানসহ বিভিন্ন দেয়ালে এফ-টেন-এর নামে রয়েছে দেয়াললিখন। প্রায়ই অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় দলটি। অথচ পুলিশ বলছে, তারা কিছুই জানত না।

এত দিন এফ-টেনের সদস্যরা ছিনতাই, জায়গা দখল, নারীদের উত্ত্যক্তসহ নানা অপরাধ করে এলেও গত বুধবার রাতে উপজেলার সেবারহাট বাজারে মাজহারুল ইসলাম ওরফে শাওন (১৮) নামের এক তরুণ খুনের পর নতুন করে আলোচনায় আসে দলটি। মাজহারুল ফেনীর দাগনভূঞা সরকারি ইকবাল মেমোরিয়াল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ বিরোধে খুন হয়েছেন ওই তরুণ। তিনিও ওই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন।

এই কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন গোলাম রাব্বি ভূঁইয়া। কোনো পদে না থাকলেও তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। গোলাম রাব্বি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আলম ওরফে রিগ্যানের চাচাতো ভাই। ফিরোজ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। স্থানীয়দের অভিযোগ, ফিরোজের প্রশ্রয়ে রাব্বি বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। তবে তা অস্বীকার করেছেন ফিরোজ।

আরও পড়ুন

সেনবাগের সেবারহাট বাজারের একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২২ সালের শুরুর দিকে সেবারহাট বাজার এলাকায় এফ-টেন নাম দিয়ে কিশোর গ্যাংটি গঠন করা হয়। এই দলের নিয়মিত সদস্যসংখ্যা ৩৫ থেকে ৪০। দিনে দিনে নানা অপরাধে তারা জড়িয়ে পড়ে। ঈদুল ফিতরের কয়েক দিন আগে সেবারহাট মধ্যম বাজার থেকে একটি কোম্পানির এক বিক্রয় প্রতিনিধিকে ধরে একটি দোকানের পেছনে নিয়ে মারধর করে সঙ্গে থাকা নগদ টাকা ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নেয় এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। পয়লা বৈশাখেও সেবারহাট বাজারে এই কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোলাম রাব্বি ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি ফেনীর দাগনভূঞায় ছিলেন। কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্ব দেন না তিনি।

পুলিশ জানায়, গত বুধবার খুন হওয়া মাজহারুলের সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের কয়েকজনের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল। গত বুধবার রাতে তাঁকে একা পেয়ে কিশোর গ্যাংয়ের আরেক পক্ষের হৃদয় নামের এক তরুণের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জন ধারালো অস্ত্র হাতে তাঁর ওপর হামলা চালায়। এর মধ্যে মো. আজাদ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

নোয়াখালী জেলা পুলিশ ‍সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের তৎপরতার বিষয়ে এর আগে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। তবে এখন যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হচ্ছে। এই কিশোর অপরাধীদের পেছনে যাঁরা আছেন, তাঁদেরও শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে।

আরও পড়ুন