বরিশাল বিভাগে ডেঙ্গুতে আরও একজনের মৃত্যু
বরিশাল বিভাগে গতকাল রোববার সকাল থেকে আজ সোমবার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে বিভাগে ডেঙ্গুতে ১১ জনের মৃত্যু হলো। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৮ জন।
এবার এ অঞ্চলে শহরের চেয়ে গ্রামে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগী বেশি, মৃত্যুও বেশি গ্রামে। গত সেপ্টেম্বর থেকে আজ সোমবার পর্যন্ত বিভাগে ২ হাজার ৫১৭ ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে জানা যায়, রোববার রাতে বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম মোখলেসুর রহমান (৩৬)। তাঁর বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার ছোনবুনিয়া গ্রামে। তিনি একটি বেসরকারি ভোগ্যপণ্য কোম্পানির ব্যবস্থাপক হিসেবে মঠবাড়িয়ায় কর্মরত ছিলেন।
মোখলেসুরের বড় ভাই মিজানুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর প্রথমে মঠবাড়িয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তাঁর ছোট ভাই। গত রোববার দুপুরে অবস্থার অবনতি হলে রাত ১১টার দিকে তাঁকে বরিশালে আনা হয়, পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়। গত কয়েক মাসে ঢাকা বা অন্য কোনো স্থানে ভ্রমণ করেননি মোখলেসুর।
পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি হলেও সাধারণ মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কোনো দৃশ্যমান কর্মসূচি দেখা যাচ্ছে না। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েই চলছে। ডেঙ্গুতে মারা যাওয়া ১১ জনের মধ্যে ৮ জন নারী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সেপ্টেম্বরে এ বিভাগে ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৬৪২। এই দুই মাসে বিভাগে গড়ে প্রতিদিন ২৭ দশমিক ৩৬ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, গ্রামে মৃত্যুর পেছনে মূল কারণ হচ্ছে, আক্রান্ত রোগীরা চিকিৎসা শুরু করেন দেরিতে। আবার নারীদের মৃত্যু বেশির পেছনে কারণ হচ্ছে, গ্রামের নারীরা শহর অপেক্ষা পুরুষের চেয়ে কম পুষ্টি পান। এ জন্য তাঁদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম। এটা নারীদের মৃত্যু বেশি হওয়ার কারণ হতে পারে।
ডেঙ্গু রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়লেও সে অনুযায়ী চিকিৎসাসুবিধা বাড়েনি। বিভাগের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় আলাদা ওয়ার্ড চালু করা যায়নি। একই সঙ্গে বিভাগের কোনো হাসপাতালে প্লাটিলেট সেল সেপারেটর যন্ত্র না থাকায় এই রোগীদের ঢাকায় পাঠাতে হচ্ছে। এতে মারাত্মক ঝুঁকিতে আছে দক্ষিণাঞ্চলের আটটি সরকারি হাসপাতালের ডেঙ্গু রোগীরা।