ঘুমের মধ্যেও চিৎকার করে কেঁদে উঠছে মেয়েটি

ধর্ষণবিরোধী প্ল্যাকার্ড
প্রথম আলো ফাইল ছবি

পঞ্চগড়ে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীটি (১৬) ঘুমের মধ্যেই চিৎকার করে কেঁদে উঠছে। পরিবারের সদস্যরা নানাভাবে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও তার মানসিক ট্রমা কাটছে না। শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ না হওয়ায় ঘর থেকে বের হচ্ছে কম।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের কাছে এসব কথা জানান মেয়েটির বাবা। তিনি বলেন, ‘মেয়েকে জীবিত ফেরত পেয়েছি, এটাই আমাদের ভাগ্য। যে নরপশুদের পাল্লায় আমার মেয়ে পড়েছিল, তাদের মধ্যে কারও কারও বয়স আমার চেয়েও বেশি। তাদের কাছে হাত-পা ধরে সাহায্য চাওয়ার পরও আমার মেয়েটি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের সময় সবুজ নামের একজন আমার মেয়ের পিঠে টর্চলাইট দিয়ে আঘাতও করেছিল। আমার অবুঝ মেয়েটিকে এভাবে নির্যাতনকারীদের বিচার চাই।’

ঘটনার পাঁচ দিন পার হলেও মামলার প্রধান আসামিসহ পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুজনকে। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

ওই স্কুলছাত্রীর বাবা আরও বলেন, ‘বুধবার মধ্যরাতে হঠাৎ মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে তার ঘরে গিয়ে দেখি, সে ঘুমাচ্ছে। ওই ভীতি কাটেনি মেয়েটির। চিকিৎসক আর পুলিশের কথা অনুযায়ী মেয়েকে বোঝানোর চেষ্টা করছি। তাকে কোনো প্রকার চাপ দিতে চাই না। সহপাঠীরা ঘটনাটি জেনে তার সঙ্গে অন্যভাবে আচরণ করতে পারে, এ জন্য স্কুলে যাওয়ারও কথা বলি না। আগে সে পুরোপুরি সুস্থ হোক, মানসিকভাবে সুস্থ হোক। তখন পাঠাব।’

আরও পড়ুন

ঘটনার পাঁচ দিন পার হলেও মামলার পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আটোয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) দুলাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, মামলার প্রথম দিকে তাঁরা শুধু আসামিদের নাম পেয়েছিলেন। তদন্ত করে তাঁদের পুরো ঠিকানা বের করা হয়। কথিত প্রেমিক হাসানসহ আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। অভিযান অব্যাহত আছে।

মেয়েকে জীবিত ফেরত পেয়েছি, এটাই আমাদের ভাগ্য। যে নরপশুদের পাল্লায় আমার মেয়ে পড়েছিল, তাদের মধ্যে কারও কারও বয়স আমার চেয়েও বেশি। তাঁদের কাছে হাত-পা ধরে সাহায্য চাওয়ার পরও আমার মেয়েটি নির্যাতনের শিকার হয়েছে
ধর্ষণের শিকার স্কুলছাত্রীর বাবা

গত শনিবার পঞ্চগড় জেলার আটোয়ারী উপজেলার ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা পুরাতন আটোয়ারী-বন্দরপাড়া এলাকার একটি বাগানে এই দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরদিন ওই স্কুলছাত্রীর বাবা আটোয়ারী থানায় সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ মামলাটি তদন্ত করে সাত আসামির নাম-ঠিকানা নিশ্চিত হয়। রোববার আটোয়ারীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মো. রাজু (১৯) ও সাইফুল ইসলামকে (৪৮) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার দুই আসামি মো. রাজু (১৯) ও সাইফুল ইসলাম (৪৮) গত সোমবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ওই দিন স্কুলছাত্রীও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছিল। জবানবন্দি শেষে গ্রেপ্তার দুজনকে আদালতের আদেশে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে ওই দিনই মেয়েটিকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়। পরে তাঁরা বাড়ি ফেরেন।

আরও পড়ুন

মামলার অন্য আসামিরা হলেন আটোয়ারী উপজেলার ধামোর ইউনিয়নের মালগোবা এলাকার বাসিন্দা মো. হাসান (২৫), একই ইউনিয়নের ফুতেপুর এলাকার সবুজ (৩০), পুরাতন আটোয়ারী এলাকার আমিনুল ইসলাম ওরফে ডিপজল (২৭), শ্রী অমর (৩৫) ও নজরুল ইসলাম (৪০)। বর্তমানে পাঁচ আসামি পলাতক।

ভুক্তভোগী কিশোরীর বাড়ি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায়। সে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী।

মামলার এজাহার ও গ্রেপ্তার আসামিদের জবানবন্দি অনুযায়ী, বছরখানেক আগে মুঠোফোনে পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই স্কুলছাত্রীর সঙ্গে আটোয়ারী উপজেলার মালগোবা এলাকার মো. হাসানের (২৫) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শনিবার বিকেলে মুঠোফোনে হাসান ওই স্কুলছাত্রীকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে পঞ্চগড় শহরে ডেকে আনেন। পরে ওই ছাত্রীকে নিয়ে হাসান তাঁর বন্ধু মো. রাজুসহ মোটরসাইকেলে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে সন্ধ্যার পর একটি বাগানে নিয়ে যান। ওই বাগানে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন মো. হাসান। এ সময় সামান্য দূরে ছিলেন হাসানের বন্ধু মো. রাজু (১৯)। স্থানীয় মো. সবুজ (৩০) নামের এক যুবক দেখে ফেললে মোটরসাইকেলে সেখান থেকে পালিয়ে যান হাসান ও রাজু। একপর্যায়ে সবুজসহ স্থানীয় পাঁচজন মেয়েটিকে ধর্ষণ করেন।

ঘটনার পর রাতে স্থানীয় এক ব্যক্তি মেয়েটিকে উদ্ধার করে পাশের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানে মেয়েটির কাছ থেকে তাঁর স্বজনদের মুঠোফোন নম্বর নিয়ে যোগাযোগ করলে স্বজনেরা গভীর রাতে মেয়েটিকে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।