এহসানুল হুদাকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ায় রেলপথ অবরোধ

কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে শেখ মজিবুর রহমান ইকবালের পরিবর্তে সৈয়দ এহসানুল হুদাকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে বাজিতপুরের সরারচর রেলস্টেশনে রেলপথ অবরোধ করে স্থানীয় বিএনপির একটি পক্ষ। বুধবার দুপুরেছবি: প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে শেখ মজিবুর রহমান ইকবালের পরিবর্তে সৈয়দ এহসানুল হুদাকে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়ার প্রতিবাদে বাজিতপুরের সরারচর রেলস্টেশনে রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে। মজিবুর রহমানের সমর্থকেরা বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত এই বিক্ষোভ করেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিক্ষোভকারীরা সরারচর রেলস্টেশন এলাকায় রেললাইনের ওপর গাছের গুঁড়িসহ অন্যান্য জিনিস ফেলে অবরোধ সৃষ্টি করেন। এতে ওই রুটে ট্রেন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যে কারণে কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি কিছুটা বিলম্বে সরারচর স্টেশনে পৌঁছায়। যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। অবরোধ চলাকালে বিক্ষোভকারীরা বিএনপির কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেন এবং শেখ মজিবুর রহমান ইকবালকে আবারও মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন

গত সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নিজের দল বিলুপ্ত করে নেতা–কর্মীদের নিয়ে বিএনপিতে যোগ দেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা। এরপর আজ বুধবার সকালে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ মজিবুর রহমান ইকবালকে বাদ দিয়ে এহসানুল হুদাকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়।

এ সিদ্ধান্তকে ‘হঠাৎ ও অগ্রহণযোগ্য’ উল্লেখ করে ইকবালের সমর্থকেরা তাৎক্ষণিকভাবে বিক্ষোভে নামেন। তাঁদের অভিযোগ, এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে আসা নেতাকে উপেক্ষা করে নতুন যোগ দেওয়া একজন নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ায় নেতা–কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। বিক্ষোভের ফলে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে।

তবে এ বিষয়ে জানতে শেখ মুজিবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ঘনিষ্ঠ বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বাজিতপুর-নিকলীর গণমানুষের নেতা শেখ মজিবুর রহমান ইকবাল ছাড়া কাউকে মেনে নেওয়া হবে না। বিএনপির নেতা-কর্মীদের সুখে–দুঃখে দীর্ঘদিন আমাদের পাশে ছিলেন মজিবুর রহমান ইকবাল। তাই তাঁকেই আমরা চাই। হঠাৎ করে কেউ দল পরিবর্তন করে চলে এলেই আমরা তাঁকে মেনে নিতে পারি না।’

এদিকে বিএনপির মনোনয়ন পেয়ে দলের নেতৃত্বের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এহসানুল হুদা। মনোনয়ন পাওয়ার পর দলের অধিকাংশ নেতা–কর্মী তাঁর পক্ষে চলে এসেছেন দাবি করেছেন তিনি। প্রথম আলোকে মুঠোফোনে এহসানুল হুদা বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ। আমি চেষ্টা করব বিএনপির সম্মান রাখতে। আমি জয়লাভের বিষয়ে আশাবাদী।’

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, কিশোরগঞ্জের অন্য পাঁচটি আসনে বিএনপি যাঁদের প্রাথমিক মনোনয়ন দিয়েছিল দল তাঁদেরকেই প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করেছে।
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ওসমান ফারুককে বিএনপি থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। একই আসন থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়বেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ ছাড়া আসনটিতে এরই মধ্যে জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু মনোনয়নপত্র কিনেছেন। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলামকেই চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যদিও তাঁর মনোনয়নের পর থেকে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী অন্য নেতারা আন্দোলন করে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনে মো. জালাল উদ্দিন, কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে ফজলুর রহমান ও কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলমকে বিএনপি থেকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।

দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত নেতাদের বিষয়ে জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, দল বুঝেশুনেই সব আসনে প্রার্থী দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে প্রতিটি আসনেই বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন।

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ জেলার মোট ছয়টি আসনের ৪৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশ ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আন্দোলনের’ আহ্বায়ক এ কে এম আলমগীরসহ অন্তত সাতজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র কিনেছেন।