মদসহ যশোরের পৌর কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ সুপারের অপসারণ দাবি

যশোর পৌর কাউন্সিলর জাহিদ হোসেনসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পুলিশ সুপারের অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোর পৌরসভার সভাকক্ষেছবি: প্রথম আলো

যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদারকে অপসারণের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোর পৌরসভার সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে যশোর সদর উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিদের একাংশ।

দাবি মানা না হলে পৌরসভা ও যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মবিরতি পালন করবেন বলে তাঁরা ঘোষণা দেন।

যশোর সদর উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভার জনপ্রতিনিধিরা দুই অংশে বিভক্ত। এক অংশের নেতৃত্ব দেন যশোর-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ এবং অপর অংশের নেতৃত্ব দেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার। যাঁরা সংবাদ সম্মেলন করেছেন, তাঁরা কাজী নাবিল আহমেদের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন

বুধবার রাতে কাজী নাবিলের অনুসারী হিসেবে পরিচিতি যশোর পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জাহিদ হোসেন মিলনসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শহরের পালবাড়ি মোড়ে কাউন্সিলর জাহিদ হোসেন মিলনের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে এ অভিযান চালানো হয়।

পুলিশের ভাষ্য, ওই চারজনকে মদ্যপ অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে মদ্যপানের সরঞ্জাম ও দুই বোতল বিদেশি মদ জব্দ করা হয়েছে। পৌর কাউন্সিলর জাহিদ হোসেনসহ গ্রেপ্তার সবার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।

যশোরের পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা না হলে পৌরসভাসহ যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ধারাবাহিক কর্মবিরতি পালন করবেন।

গ্রেপ্তার অপর ব্যক্তিরা হলেন শহরের টালিখোলা এলাকার শেখ দস্তগীর হোসেন (৪৪), কদমতলা এলাকার শফিকুল ইসলাম (৩৭) ও টালিখোলা এলাকার মারুফুজ্জামান (৩৯)। তাঁরা কাউন্সিলর জাহিদ হোসেনের সহযোগী। বৃহস্পতিবার গ্রেপ্তার চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওই গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং হয়রানি ও সম্মানহানির অভিযোগ তুলে পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইনের অপসারণের দাবি করে পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারীর নেতৃত্বে জনপ্রতিনিধিদের একাংশ। তাঁরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বেশ আগে থেকেই যশোরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। চুরি, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি বেড়েছে। খুনের মতো ঘটনা অহরহ ঘটছে। অধিকাংশ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ রয়েছে। কিন্তু পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী আসামিদের আটক না করে অন্যদের হয়রানি করছে। এর আগে যুবলীগের বর্ধিত সভার আগের দিন কাউন্সিলর শাহেদ হোসেনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। কিন্তু থানায় তাঁর পক্ষ থেকে মামলা নেওয়া হয়নি। ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন থানায় গেলে ‘এসপির নির্দেশ আছে, মামলা নেওয়া যাবে না’ বলে তাঁদের থানা থেকে বের করে দেওয়া হয়।

জনপ্রতিনিধিরা বলেন, যশোরের বর্তমান পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোছাইন যশোরে থাকলে এই অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার কোনো সুযোগ নেই। কয়েক দিন ধরে যশোর পৌরসভার কাউন্সিলর শেখ জাহিদ হোসেন মিলন, শাহেদ হোসেন ওরফে নয়ন, শাহিদুর রহমান ওরফে রিপনসহ বেশ কয়েকজনের অফিস ভাঙচুর করেছে পুলিশ। এমনকি এই কাউন্সিলরদের বাসভবনেও হামলা করেছে। পুলিশের এই অপতৎপরতার মাধ্যমে প্রকৃত অপরাধী ও সন্ত্রাসীকে আড়াল করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে প্যানেল মেয়র মোকসিমুল বারী অপু বলেন, যশোরের পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করা না হলে পৌরসভাসহ যশোর সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ধারাবাহিক কর্মবিরতি পালন করবেন।

যশোর পৌরসভার মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন হলেও উপস্থিত ছিলেন না পৌর মেয়র হায়দার গণি খান পলাশ। পৌরসভার ১২ কাউন্সিলরের মধ্যে মাত্র ৩ জন সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা হলেন রাজিবুল আলম, আসাদুজ্জামান ও মোকসিমুল বারী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র হায়দার গণি খান বলেন, পৌরসভা ভবনে সংবাদ সম্মেলন হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ অবগত নয়। এ ঘটনায় পৌরসভার কার্যক্রমে কোনো প্রভাব পড়বে না।

সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, যশোরে আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে পুলিশের কার্যক্রম চলমান থাকবে। আইনশৃঙ্খলা অবনতি হলে যে ব্যক্তিই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একাধিক মামলার আসামি কাউন্সিলর জাহিদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করায় একটি পক্ষ ফুঁসে উঠেছে। শান্তিশৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ যা যা করা দরকার, সব করে যাবে।