নোয়াখালীতে প্রকৌশলীকে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করার ঘটনায় ৪ দিনেও মামলা হয়নি
অনুমোদনহীন বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণে বাধা দেওয়ায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাট পৌরসভায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলামকে মারধর ও তাঁর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় চার দিনেও থানায় মামলা হয়নি। এ ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে পুলিশ বলছে, হামলার শিকার প্রকৌশলী চিঠি আকারে একটি ‘অসম্পূর্ণ’ অভিযোগ বাহক মারফত পাঠিয়েছেন। এ কারণে সেটিকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তাই তাঁকে ফোন করে যথাযথভাবে এজাহার লিখে পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আহত প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম গেছেন। প্রথম আলোকে আজ শুক্রবার সকালে তিনি বলেন, সেই দিনের নির্যাতনের ঘটনায় তাঁর পুরো শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। মাথায়ও গুরুতর জখম হয়েছে। চিকিৎসক দেখানোর জন্য চট্টগ্রামে এক স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। আজ শুক্রবার রাতে তিনি চিকিৎসকের কাছে যাবেন।
সাইফুল ইসলাম আরও বলেন, তাঁর ওপর হামলাকারী কয়েকজনকে তিনি চিনেছেন। তাঁদের নাম উল্লেখ করে তিনি একটি লিখিত অভিযোগ গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বিউবোর স্থানীয় গাড়িচালকের মাধ্যমে থানায় পাঠিয়েছেন। এরপর শুনেছেন, তাঁর সিনিয়র আবাসিক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে (একই নামের অপর ব্যক্তি) থানায় ডেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁর অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে কি না, থানা থেকে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি।
ঘটনার সময় সাইফুল ইসলামের সঙ্গে থাকা দাপ্তরিক মুঠোফোনটি বৃহস্পতিবার তাঁর কাছ থেকে নিয়ে গেছে কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, মুঠোফোনে সংরক্ষিত অনুমোদিত ওই বিদ্যুৎ লাইন সংশ্লিষ্ট তথ্যসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত ছিল, যা তাঁকে কপি করে নিতে দেওয়া হয়নি। এর থেকে তিনি আশঙ্কা করছেন, পরিকল্পিতভাবে ফোনে থাকা তথ্যগুলো মুছে দিয়ে ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা হতে পারে। এ ছাড়া ওই অবৈধ লাইনটির ভুয়া অনুমোদন দেখানোর জন্য কাগজপত্র তৈরি করা হচ্ছে বলে তিনি জানতে পেরেছেন।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাদেকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, হামলার শিকার প্রকৌশলী চিঠি আকারে একটি অভিযোগ বাহক মারফত থানায় পাঠিয়েছেন। যার অনুলিপি দেওয়া ছিল অনেককে। তা ছাড়া ওই চিঠিতে ঘটনার সময় কিংবা সাক্ষীদের কারও নাম উল্লেখ নেই। তাই তিনি ওই প্রকৌশলীকে (হামলার শিকার) ফোন করে সঠিকভাবে এজাহার লিখে নিজে নিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন। একই কথা তিনি আবাসিক প্রকৌশলীকে ডেকে এনেও বলেছেন। কিন্তু আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত ওই প্রকৌশলী আসেননি।
সিনিয়র আবাসিক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে তাঁকে থানা থেকে ফোন করে থানায় যেতে বলা হয়। তিনি যাওয়ার পর তাঁকে বিভাগীয় মামলার বিষয়টি বলা হয়। ঘটনার তদন্ত শেষে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
শুক্রবার দুপুরে ফেনী বিউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আ স ম রেজাউন নবী প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৌশলী সাইফুল ইসলামকে মারধর ও মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। তিনি বৃহস্পতিবার সাইফুল ইসলামকে দেখে এসেছেন। তাঁকে ঘটনার বিষয়ে বাদী হয়ে মামলা করতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
গত মঙ্গলবার বিকেলে বসুরহাট পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যনিগো বাড়ির দরজায় অনুমোদনহীন একটি বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণকাজে বিউবোর ঠিকাদারের লোকজনকে বাধা দেন বিউবোর কোম্পানীগঞ্জ কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম। এ সময় লাইন নির্মাণের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় যুবলীগের মো. খোকন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের শিপন ও টিপুসহ কয়েকজন তাঁকে মারধর করেন। একপর্যায়ে তাঁকে পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বাড়ির সামনের একটি দোকানসংলগ্ন ঘরে আটকে দ্বিতীয় দফায় মারধর করা হয়। সেখানে সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই শাহদাত হোসেনও তাঁকে মারধর করেন। তাঁর মাথা ন্যাড়া করে তাঁকে আটকে রাখা হয়। রাত আটটার দিকে ফেনী থেকে বিউবোর লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করেন।