‘আমার তো আর কিছুই রইল না, সব শেষ হয়ে গেছে’

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত দুই ভাইয়ের বাবা আবু দাইয়ানকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন স্বজনেরা। সোমবার বিকেলে কাদিরপুর ইউনিয়নের ঘাটলা গ্রামে
ছবি: প্রথম আলো

‘আমি তো সব হারা হয়ে গেছি। আমার তো আর কিছুই রইল না। সব শেষ হয়ে গেছে। দারোয়ানির চাকরি করে শতকষ্টের মধ্যে দিয়ে এই ছেলেদের বড় করেছি। বড় ছেলেটা ঢাকায় ফেরি করে চটপটি বিক্রি করত। আজই তার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা আর হলো না। ছোট ভাইকে নিয়ে সে এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। আমি কীভাবে বাঁচব?’

মো. আবু দাইয়ান যখন এভাবে বিলাপ করছিলেন তখন স্বজনেরা তাঁকে ধরে রেখেছিলেন। কারণ, তাঁর দাঁড়ানোর শক্তিটুকুও ছিল না। একসঙ্গে দুই ছেলের মৃত্যুর সংবাদ শুনে সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান তিনি। এ সময় তাঁর কান্না দেখে আশপাশের সবার চোখ দিয়ে পানি পড়তে থাকে।

নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় কাদিরপুর ইউনিয়নের ঘাটলা গ্রামে আবু দাইয়ানের বাড়ি। সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর দুই ছেলে আনোয়ার হোসেন (২২) ও মোহাম্মদ হৃদয় (১৭) মারা গেছেন। একই দুর্ঘটনায় নিহত হন দাইয়ানের আরেক ভাতিজা জাহিদ হোসেনও (১৮)।

নিহত আনোয়ার হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, একসঙ্গে দুই ভাইসহ তিনজন মারা যাওয়ার ঘটনাটিকে তাঁরা মেনে নিতে পারছেন না। ঘটনার পর থেকে শত শত মানুষ ভিড় করছেন ঘাটলা গ্রামের সর্দার বাড়ি (আজিজ ড্রাইভারের বাড়ি)। বাড়ির কাছাকাছি দুটি ঘরে রাখা হয়েছে লাশ তিনটি। স্বজনদের আহাজারি থামছে না। এদিকে ছেলে মৃত্যুর সংবাদ শোনার পরই অচেতন হয়ে যান আনোয়ার ও হৃদয়ের মা তাজনেহার বেগম এবং জাহিদের মা বিলকিছ আক্তার।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আবু দাইয়ান ঢাকায় একটি বাড়িতে নিরাপত্তা প্রহরীর চাকরি করেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে। মেয়েটা সবার বড়। বড় ছেলে আনোয়ার ঢাকায় ফেরি করে চটপটির ব্যবসা করতেন। সেখান থেকে যা আয় হতো তা পরিবারকে সহায়তা করতেন। মেজ ছেলে ঢাকায় ফেরি করে বিভিন্ন জিনিস বিক্রি করেন। ছোট ছেলে হৃদয় থাকত বাড়িতে। আর জাহিদের বাবা কামাল হোসেন সৌদিপ্রবাসী।

নিহত জাহিদ ও হৃদয় (বা থেকে)
ছবি: সংগৃহীত

আনোয়ার ও হৃদয়ের মামা জামাল উদ্দিন বলেন, তাঁর দুই ভাগনে আনোয়ার ও হৃদয় এবং জাহিদ প্রতিবেশীর মোটরসাইকেল নিয়ে পাশের পৌরনবিবিরহাটের দিকে যাচ্ছিল। তাঁদের মোটরসাইকেলটি বড়পোল-পৌরনবিবি (হোরম্বি) সড়কের কাদিরপুর ইউনিয়নের ঘাটলা গ্রামে পৌঁছালে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। এতে তিনজনই মারাত্মক আহত হয়ে পাশের খালের পানিতে পড়ে যায়। পরে আশপাশের লোকজন ঘটনাটি দেখে দ্রুত এসে তাঁদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

জামাল উদ্দিন আরও জানান, তাঁর বড় ভাগনে ঢাকায় চটপটি ফেরি করে বিক্রি করত। কয়েক দিন আগে বাড়িতে এসেছিল। সোমবার সকালেই ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কী মনে করে আর যায়নি। তাঁর ভগ্নিপতি দারোয়ানের চাকরি করে কোনোমতে সংসার চালাতেন। ভিটা ছাড়া আর কিছুই নেই তাঁদের। ছেলেরা বড় হয়েছে, এবার পরিবারের হাল ধরবে— ভেবেছিলেন তাঁর বোন। কিন্তু এ দুর্ঘটনা তাঁদের পরিবারে অন্ধকার হয়ে নেমে এসেছে।

কাদিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাকির হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই দুর্ঘটনায় দুটি পরিবার শেষ হয়ে গেছে। তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান তিনি।

আরও পড়ুন