একের পর এক সামনে আসছে শিক্ষার্থীদের কোপানো ও লাঠিপেটার ভিডিও

এক শিক্ষার্থীকে ফেলে পেটাচ্ছেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দাছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

ধানখেতের পাশে কাকুতি–মিনতি করছেন এক শিক্ষার্থী। তাঁকে ঘিরে রেখেছেন স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা। তাঁদের কেউ শিক্ষার্থীকে লাঠি দিয়ে কোমরে, আবার কেউ পিঠে এলোপাতাড়ি পেটাচ্ছেন। আবার রামদা নিয়েও তেড়ে আসছেন একজন। তবে শেষ পর্যন্ত দৌড়ে প্রাণে বাঁচেন ওই শিক্ষার্থী।

গতকাল রোববার রাতে এমন একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই ভিডিও ওই দিন বেলা আনুমানিক দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের সময় ধারণ করা হয়। ভিডিওতে শিক্ষার্থীকে তিনজন মিলে পেটাতে দেখা যায়। এর মধ্যে একজনের হাতে ছিল ধারালো অস্ত্র আর দুজনের হাতে ছিল লাঠি। আক্রান্ত শিক্ষার্থীর পরনে ছিল ফুলহাতা জার্সি। এ ধরনের জার্সি সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অন্তবিভাগের খেলাধুলা উপলক্ষে বানান শিক্ষার্থীরা।

এ ধরনের আরও চারটি ভিডিও সামনে এসেছে। এসব ভিডিওতে গ্রামবাসীদের ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর করতে দেখা গেছে। কিছু ভিডিওতে শিক্ষার্থীদেরও লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়াতে দেখা গেছে।

শিক্ষার্থীকে ধানখেতে ঘিরে ধরে পেটানোর দৃশ্য ধারণ করা হয় দূর থেকে
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া।

একটি ভিডিওতে দেখা যায়, এক শিক্ষার্থীকে মাটিতে ফেলে পেটাচ্ছেন কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা। এ সময় তাঁর মাথা ফেটে রক্ত বের হয়। তাঁর কাঁধে ছিল একটি ব্যাগ। স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজনের হাতে রামদা ছিল। তবে এ শিক্ষার্থীকে কোপানো হয়েছে কি না, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। একপর্যায়ে শিক্ষার্থী কাকুতি–মিনতি করলে কয়েকজন গ্রামবাসী তাঁকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন। পরে ওই শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান। ওই শিক্ষার্থী কোন বিভাগের, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আরেকটি ভিডিওতে সাদা শার্ট পরা এক শিক্ষার্থীকে একতলা ছাদ থেকে ফেলতে দেখা গেছে। এই ভিডিও পাশের একটি ভবন থেকে ধারণ করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় এক বাসিন্দা লাথি দেওয়ার পরই ওই শিক্ষার্থী ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান। এরপরও ওই শিক্ষার্থীকে উদ্দেশ্য করে ছাদ থেকে ইটের টুকরা ছোড়েন কয়েকজন। ওই শিক্ষার্থীর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আরেকটি ভিডিওতে ধানখেতে তাড়া করে ৮ থেকে ১০ জন মিলে একজনকে পেটাতে দেখা গেছে। তবে যাঁকে পেটানো হচ্ছে, তিনি শিক্ষার্থী কি না, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

আরও পড়ুন

ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু কাওছার মোহাম্মদ আজ সোমবার বেলা একটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, এখন পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। লিখিত অভিযোগও তাঁরা পাননি। অভিযোগ পেলে করণীয় ব্যবস্থা তাঁরা নেবেন।

ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হচ্ছে এক শিক্ষার্থীকে। পাশের একটি ভবন থেকে ভিডিওটি ধারণ করা
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া।

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা তিনটি মামলা করার প্রস্তুতি নিয়েছেন। এরই মধ্যে খসড়া তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায়, আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করার ঘটনায়। আর তৃতীয় মামলার ব্যাপারে পরে জানানো হবে।

গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টা থেকে গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত দফায় দফায় ক্যাম্পাস–সংলগ্ন জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এতে দুই পক্ষের অন্তত ২২০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী।

ক্যাম্পাসের একটি ভাড়া বাসার দারোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে মারধর করেছেন, এমন খবরে সংঘর্ষের শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান ও মো. কামাল উদ্দিন, প্রক্টর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফসহ শিক্ষকেরা দুই পক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। মুহূর্তেই দুই পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়।

আরও পড়ুন

দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের হাতে ছিল রড, পাইপ, কাঠের লাঠি ও পাথর। গ্রামবাসীর হাতে ছিল রামদা, রড ও পাইপ। সংঘর্ষে জোবরা গ্রাম রণক্ষেত্র হয়ে পড়ে। সংঘর্ষ একপর্যায়ে গ্রামের অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী অলিগলিতে আটকে গেলে তাঁদের মারধর করা হয়। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় একের পর এক শিক্ষার্থীকে নিয়ে যাওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রে। একপর্যায়ে গতকাল বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন।

সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত দুই শিক্ষার্থীকে নগরের বেসরকারি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। আরেকজনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।