কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার সকালে শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাস ও হাসপাতালের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন।
ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচি পালন শেষে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দেন শিক্ষার্থীরা। এর অনুলিপি কলেজের অধ্যক্ষ ও প্রকল্প পরিচালকের কাছেও দেওয়া হয়।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালু না হওয়ায় মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী, রোগীসহ সাধারণ মানুষের ব্যাপক অসুবিধা হচ্ছে। আর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রশাসনিক অনুমোদন হয়নি। কবে নাগাদ অনুমোদন হবে, সে বিষয়েও তথ্য নেই।
নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের একটি ব্লকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আংশিক বহির্বিভাগ চালু হয়। সেখানে শুধু বহির্বিভাগে কিছু রোগী দেখা হয়। হাসপাতালে রোগী ভর্তি, এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না।
২০১১ সালে কুষ্টিয়া শহরে ম্যাটসে (মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ট্রেনিং স্কুল) অস্থায়ীভাবে মেডিকেল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয়। মূল ক্যাম্পাসে শিক্ষা কার্যক্রম চালু হয় ২০২২ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে। সেখানে ছয়তলা একাডেমিক ভবন, চারতলা করে দুটি হোস্টেল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিন ও দুই তলাবিশিষ্ট ডরমিটরি, মসজিদসহ আরও কিছু ভবন হস্তান্তর করা হয়। সেখান থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লিনিক্যাল ক্লাস করেন। শিক্ষার্থীরা দুটি ভাড়া বাসে যাতায়াত করেন। কারণ, মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল অংশ চালু হয়নি।
এদিকে তিন দফা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর পরও মেডিকেল কলেজের হাসপাতাল চালু হয়নি। নির্মাণাধীন হাসপাতাল ভবনের একটি ব্লকে গত বছরের ১৫ নভেম্বর আংশিক বহির্বিভাগ চালু হয়। সেখানে শুধু বহির্বিভাগে কিছু রোগী দেখা হয়। হাসপাতালে রোগী ভর্তি, এমনকি পরীক্ষা-নিরীক্ষাও হয় না।
শিক্ষার্থীরা জানান, গত রোববার থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ভাড়া করা দুটি বাসের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কলেজের অধ্যক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন বাসের ভাড়ার টাকা সরকার বন্ধ করে দিয়েছে। এ ছাড়া চালক না থাকায় মেডিকেল কলেজের একটি বাস ব্যবহার করা যাচ্ছে না। শিক্ষার্থীরা কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে যেতে পারছেন না। নিরুপায় হয়ে তাঁরা আন্দোলন করছেন। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসে বর্তমানে প্রায় ৩৫০ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
আজ বুধবার সকাল ১০টার দিকে শতাধিক শিক্ষার্থী কলেজের ক্যানটিন থেকে প্ল্যাকার্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন নিয়ে কলেজ চত্বরে বের হন। মিছিল নিয়ে তাঁরা হাসপাতালের সামনে গিয়ে জড়ো হন। সেখানে তাঁরা স্লোগান দিতে থাকেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালের সামনে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও সভা করেন।
এ সময় বক্তব্য দেন শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মনিটর আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি বলেন, মেডিকেল শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস করার জন্য হাসপাতাল খুবই জরুরি। জেনারেল হাসপাতালে অপ্রতুল যন্ত্রাংশ, ব্যাপক রোগীর ভিড়, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ প্রভৃতি সমস্যা সত্ত্বেও সেখানে বাসযোগে কলেজ থেকে যাওয়া হতো। এখন বিভিন্ন কারণে বাস-সুবিধা বন্ধ হওয়ায় বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় ২০০ জন শিক্ষার্থীর জেনারেল হাসপাতালে যাতায়াত অসম্ভব কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে।
পরে শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক এ এইচ এম আনোয়ারুল ইসলামের কক্ষে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। এ সময় আনোয়ারুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমিও চাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাসপাতাল চালু হোক। কিন্তু নানা জটিলতা রয়েছে। প্রশাসনিক অনুমোদন মেলেনি। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি এখনো ঠিকমতো স্থাপন হয়নি। এসি, ১৯টি বড় বড় লিফটসহ বেশ কিছু যন্ত্রাংশ চালু হয়নি।’
আনোয়ারুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল ভবন হস্তান্তর হয়েছে। তবে জনবল নিয়োগসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি। হাসপাতাল চালুর বিষয়ে একাধিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। যা কিছু করার, মন্ত্রণালয় করবে।’
তিনবার মেয়াদ বাড়িয়েও কাজ শেষ হয়নি
গণপূর্ত কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয় ধরে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়।
কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর মৌজায় ২০ একর জমিতে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে ৫৩টি প্যাকেজে ৫২ জন ঠিকাদার কাজটি করতে থাকেন। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা থাকলেও শেষ হয়নি। তখন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ২০১৮ সাল পর্যন্ত নানা জটিলতায় কাজ বন্ধ থাকে। ২০১৮ সালে প্রথম দফায় কাজের মেয়াদ ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয়বারের মতো গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।
যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন না হওয়ার বিষয়ে কুষ্টিয়া গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, প্রথম দিকে পরিকল্পনায় কিছু ঘাটতি ছিল। পরে নানা জটিলতা দেখা দেয়। ধীরে ধীরে সবকিছু কাটিয়ে কাজ শেষ করা হয়। প্রকল্প পরিচালক সরওয়ার জাহান প্রথম আলোকে বলেন, দামি দামি যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। এমআরআই, আলট্রাসনো, এক্স-রেসহ অন্তত ১৩ ধরনের দামি যন্ত্রপাতি বেশ কয়েক মাস ধরে প্যাকেটবন্দী অবস্থায় পড়ে আছে। হাসপাতাল চালুর বিষয়ে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন।