গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সব কটি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট গ্রহণ চলছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। নতুন এই পদ্ধতিতে ভোটদানের পর ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। আজ সকাল থেকে তিনটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ প্রবীণ ভোটাররা ইভিএমে ভোটদানের পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। তবে ইভিএমে দ্রুত ভোট দেওয়ার পর অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেন। আবার কেউ কেউ ভোট দেওয়ার পর সন্দেহ প্রকাশ করেছেন, তাঁর ভোটদান সম্পন্ন হয়েছে কি না।
সকাল ৯টার দিকে সিটি করপোরেশনের ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের পোড়াবাড়ি সাবেরিয়া দাখিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে কথা হয় পোড়াবাড়ি গ্রামের অশীতিপর আবদুল গনির সঙ্গে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন তিনি। তাই স্কুলপড়ুয়া নাতি মো. শাহরিয়ারের হাত ধরে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন। ১০ মিনিট পর তিনি ভোটকেন্দ্রের কক্ষ থেকে বের হয়ে আসেন। বয়স বিবেচনায় তাঁকে ভোটারদের সারিতে দাঁড়াতে হয়নি।
আবদুল গনি বলেন, ‘ভিতরে গেছি। হাতে কালি দিল। এরপর যন্ত্রের কাছে যাইতে কইল। মার্কা দেইখা যন্ত্রে টিপ দিলাম, ভোট হইছে কি না, বুঝলাম না! একটা বাতি জ্বলছে।’—এ কথা বলেই হেসে দিলেন আবদুল গনি।
এর আগে কখনো ইভিএমে ভোট দেননি আবদুল গনি। সব সময় ব্যালট পেপারে সিল দিয়ে ভোট দিয়েছেন। এই নির্বাচনে ইভিএমে ভোট হবে শুনে তিনি কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। বাড়ির কাছে মক ভোটিংয়েও (প্রশিক্ষণ) অংশ নিতে পারেননি। তবে তাঁর এক স্বজন ভোট দেওয়ার পদ্ধতি বারবার বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার ভোটকেন্দ্রে নিয়োজিত ভোট গ্রহণ কর্মকর্তারাও তাঁকে সহযোগিতা করেছেন বলে জানান তিনি।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সিটি করপোরেশনের ভাওরাইদ হাজী রোকন উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কথা হয় ভাওরাইদ গ্রামের মোছা. খাতে বানুর (৭৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বোনের ছেলেটার সাথে আইসা ভোট দিলাম। আগে তো কাগজে সিল মারতাম। আজকে মেশিনে দিছি। ভালোই হইতাছে ভোট।’
একই কেন্দ্রে মোছা. মজিদা খাতুন (৭৬) নামের আরেক ভোটারের সঙ্গে কথা হলো। প্রথমবারের মতো ইভিএম ভোট দিয়ে তিনি বলেন, ‘যন্ত্রে টিপ দিছি, ভোট অয়া (হয়ে) গেছেগা। এইডা কেমন সিস্টেম! ভোট তো অইতেই আছে।’
সকাল পৌনে ১০টার দিকে সালনা নাসির উদ্দিন মেমোরিয়াল উচ্চবিদ্যালয় অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন সালনা গ্রামের মো. রফিকুল ইসলাম (৬৫)। ভোট দিতে কোনো সমস্যা হয়নি জানিয়ে রফিকুল বলেন, ‘ভোটের আগে আমরা যন্ত্রে ভোটের ট্রেনিং (মক ভোটিং) নিছি। তাই সমস্যা অয়নাই। তবে কাগজে ভোট দেওয়া সহজ আছিল।’
নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী, গাজীপুর সিটিতে মোট ভোটার ১১ লাখ ৭৯ হাজার ৪৭৬ জন। তাঁদের মধ্যে ৫ লাখ ৯২ হাজার ৭৬২ জন পুরুষ, ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৬৯৬ জন নারী ও ১৮ জন হিজড়া। এই সিটিতে ৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড আছে। এই সিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট ৩৩২ জন প্রার্থী। এর মধ্যে মেয়র পদে ৮ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৭৮ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৪৬ জন । নির্বাচনে মেয়র পদপ্রার্থীরা হলেন—নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আজমত উল্লা খান, টেবিলঘড়ি প্রতীকে জায়েদা খাতুন (সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা), লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের গাজী আতাউর রহমান, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির মো. রাজু আহাম্মেদ, মাছ প্রতীকে গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। এ ছাড়া স্বতন্ত্র থেকে মেয়র পদে ঘোড়া প্রতীকে মো. হারুন-অর-রশীদ ও হাতি প্রতীকে সরকার শাহনুর ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।