তিস্তার পর ধরলার পানিও বিপৎসীমার ওপর, কুড়িগ্রামে পানিবন্দী ১৫ হাজার মানুষ
কুড়িগ্রামে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। জেলার নদ-নদীগুলোর মধ্যে ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে তিস্তার পানি বেড়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও এখনো বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বাড়ার কারণে নদ-নদীর অববাহিকার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ১৫ হাজারের বেশি পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ভেঙে পড়েছে এসব এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা। ডুবে গেছে সবজির খেতসহ বিভিন্ন উঠতি ফসল।
গতকাল বুধবার বিকেলে সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরে গিয়ে দেখা যায়, দুধকুমার নদের পানি কিছুটা কমেছে। তবে তীব্র স্রোতের কারণে প্রথম আলো চর থেকে নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের রসুলপুর পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদের ভাঙনে ভেঙে যাওয়া ভিটা থেকে তাঁদের বসতবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। চারদিকে বন্যার পানি থাকায় শুকনা জায়গার অভাবে এসব নদীভাঙা মানুষ প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা ও স্থানীয় ঈদগাহ মাঠ, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভিটায় আশ্রয় নিয়েছেন।
গত এক সপ্তাহের ভাঙনে প্রায় ২০টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা, রসুলপুর মাদ্রাসা ও বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের দুটি সোলার পাম্পসহ প্রায় দুই শতাধিক পরিবার। গতকাল বিকেলে এসব নদীভাঙনের শিকার পরিবারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫০ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
গঙ্গাধর নদের ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়েছেন মারুফা বেগম (৩৫)। দুই ছেলে-মেয়ে নিয়ে তিনি নদীতীরের ভাঙা ভিটা থেকে খড়ি সংগ্রহ করছিলেন। তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে ভাত খেয়ে শিশুসন্তান নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। রাত দুইটার দিকে হঠাৎ নদীর শোঁ শোঁ শব্দ আর ভাঙনের গর্জনে ঘুম থেকে জেগে ওঠেন, দেখেন ভিটার একাংশ নদীতে ভেঙে পড়েছে। প্রতিবেশীদের ডেকে এনে সারা রাত ঘর সরিয়েছেন। গরু-ছাগল নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। গতকাল ঈদগাহ মাঠে একটা ঘর তুলে থাকছেন।
এ ছাড়া তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে থাকায় রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা বুড়িরহাট স্পার বাঁধ ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। তিস্তা নদীর তীরবর্তী থেতরাই ইউনিয়নের গোরাইপিয়া, জুয়ান সতরা, চর নিয়াসা ও ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের খিতাবখা, গতি আসাম চরের নিমাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ৯ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের আরও প্রায় ১৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। বন্যার পানিতে প্রায় অর্ধশতাধিক চর প্লাবিত হয়েছে। এসব নদ-নদীর তীরবর্তী অঞ্চলে ভাঙন দেখা দিয়েছে।
আজ সকাল ৯টায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কুড়িগ্রামের তথ্যমতে, দুধকুমার নদের পানি সমতলে বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৭ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে ও ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে ৪৪ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে ৯৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বেড়ে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ও ধরলা নদীর পানি তালুক শিমুলবাড়ী পয়েন্টে ২৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ প্রথম আলোকে বলেন, কুড়িগ্রামে উজানের ঢলে নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যার্তদের উদ্ধারের জন্য চারটি স্পিডবোট প্রস্তুত রয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ১২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা ও ২৫১ মেট্রিক টন চাল প্রস্তুত রয়েছে। প্রথম আলো চরে নদীভাঙনের শিকার ৫০টি পরিবারের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।