সৈয়দপুর রেলস্টেশনে নারী যাত্রীকে মারধরের অভিযোগে বুকিং সহকারীকে বদলি

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন
ফাইল ছবি

রেলওয়ে স্টেশনে নারী যাত্রীকে মারধরের মামলার আসামি নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম ওরফে রনিকে বদলি করা হয়েছে। শুক্রবার সকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ওই বুকিং সহকারীর বিরুদ্ধে চলতি মাসেই ওঠা আগের একটি অভিযোগের তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সৈয়দপুর রেলওয়ের স্টেশনমাস্টার টুটুল চন্দ্র সরকার বলেন, নারী যাত্রীকে নির্যাতনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলামকে বদলি করা হয়েছে। শুক্রবারের মধ্যে জাহেদুলকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুর স্টেশনে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন

সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারী মাহবুবুর রহমান বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়াই বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম ১০ সেপ্টেম্বর এক যাত্রীর কাছে খুলনাগামী ছয়টি টিকিট বিক্রি করেন, যা পুরোপুরি বেআইনি। ওই সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছিল। এ ঘটনায় ওই সময় রেলওয়ের পাকশী অঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কার্যালয় ওই বুকিং সহকারীকে শোকজ করে। পরে এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

রেলের অভিযুক্ত কর্মচারীরা মিলে ওই নারী যাত্রীকে টেনেহিঁচড়ে বুকিং সহকারীর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখেন। পরে চারজন মিলে ওই নারীকে দেয়ালের সঙ্গে মাথা চেপে ধরে চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁর কেনা টিকিট ও তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন কেড়ে নেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।

এ বিষয়ে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিউল ইসলাম জানান, গত বুধবার রাতে বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম রনির বিরুদ্ধে রাবেয়া আকতার মুন (৩০) নামের এক নারী তাঁকে হেনস্তা ও মারধরের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করেন, যা পরে মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। ওই অভিযোগে রেলওয়ের আরও কয়েকজন অজ্ঞাতনামা কর্মচারীর কথা উল্লেখ করা রয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার সন্ধ্যায় রাবেয়া আকতার চিলাহাটি থেকে ঢাকাগামী আন্তনগর নীলসাগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ১ অক্টোবরের আগাম টিকিটের জন্য স্টেশনে যান। এ সময় রেলওয়ে স্টেশনের কাউন্টারে কর্তব্যরত বুকিং সহকারী জাহেদুল ইসলাম ওরফে রনি জানান, ওই তারিখের কোনো টিকিট নেই। তবে তিনি ওই নারী যাত্রীকে টিকিট পেতে সৈয়দপুর প্লাজার গ্লোবাল কম্পিউটার অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার নামে কালোবাজারে টিকিট বিক্রির দোকানে যেতে বলেন। সেখানে ছয়টি টিকিটের মূল্য হিসেবে গ্লোবাল কম্পিউটারের মালিক মনোয়ার হোসেন ওই নারী যাত্রীর কাছে ৩ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে একটি স্লিপ দিয়ে পুনরায় রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারীর কাছে পাঠান।

রাবেয়া আকতার জানান, বুকিং সহকারী জাহেদুলকে ওই স্লিপ দেওয়ার পর তাঁকে দেড় হাজার টাকা মূল্যের আক্কেলপুর থেকে ঢাকা পর্যন্ত চারটি টিকিট (আসন ‘ছ’ কোচের ৮৬, ৯০, ৯১ ও ৯২) এবং ৩০০ টাকা মূল্যের পার্বতীপুর থেকে জয়পুরহাট পর্যন্ত দুটি টিকিট (আসন ‘ছ’ কোচের ৫২ ও ৫৬) দেন। এ সময় সৈয়দপুর স্টেশন থেকে ঢাকা পর্যন্ত টিকিট কেন দিলেন না এবং ১ হাজার ৮০০ টাকার টিকিটের মূল্যের স্থলে ৩ হাজার ২০০ টাকা নেওয়ার কারণ জানতে চাইলে বুকিং সহকারী জাহেদুল ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এ সময় রেলের আরও দুজন কর্মচারী মিলে ওই নারী যাত্রীকে টেনেহিঁচড়ে বুকিং সহকারীর কক্ষে নিয়ে গিয়ে আটকে রাখেন। পরে রেলের কর্মচারীসহ চারজন মিলে ওই নারীকে দেয়ালের সঙ্গে মাথা চেপে ধরে চড়থাপ্পড় মারতে থাকেন। একপর্যায়ে তাঁর কেনা টিকিট ও তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন কেড়ে নেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা।