ফরিদপুরে ৩৮ ঘণ্টার বাস ধর্মঘট শুরু, দুর্ভোগে সাধারণ যাত্রীরা
ফরিদপুরে আজ শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে বাস ও মিনিবাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। মহাসড়কে তিন চাকার যান ‘বন্ধের দাবিতে’ ৩৮ ঘণ্টার এ পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে জেলা বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। যদিও বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, আগামীকাল শনিবার ফরিদপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে সামনে রেখে সরকার ও প্রশাসনের ইন্ধনে এই বাস ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।
ধর্মঘটের প্রথম দিনেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। আজ সকাল আটটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, নতুন বাসস্ট্যান্ড এবং ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এলাকা ঘুরে যাত্রীদের যানবাহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
নতুন বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাসগুলো টার্মিনালে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এক কোণে দেখা গেল কয়েকজন পরিবহনশ্রমিক কেরাম খেলছেন। সেখানে সাকিব মিয়া (২৭) নামের এক শ্রমিক বলেন, ‘আমরা ধর্মঘট করছি, কিন্তু কিসের জন্য ধর্মঘট, তা আমরা জানি না। আমাদের নেতাদের কথায় চলতে হয়। তবে আমাদের তো টাকা আয় না করলে প্রতিদিন ঘরে চাল জোটে না।’
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের সামনে কথা হয় মাদারীপুরের উপজেলার রাজৈর এলাকার সুমাইয়া ইসলামের (২৪) সঙ্গে। তিনি মাদারীপুর নাজিমুদ্দিন কলেজের শিক্ষার্থী। সুমাইয়া বলেন, তাঁর মা ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। এ জন্য মাকে নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। বাড়িতে ফেরার জন্য বের হয়ে দেখেন বাস ধর্মঘট চলছে। ফরিদপুর থেকে টেকেরহাটের ভাড়া ১০০ টাকা। কিন্তু ধর্মঘটের কারণে অ্যাম্বুলেন্সে করে জনপ্রতি ২০০ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে।
পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে নাটোরের কৃষি শ্রমিক দুলু মিয়াকে (৫৫) বাসের অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা যায়। তিনি ফরিদপুর সদরের ডিক্রির চর ইউনিয়নে এসেছিলেন ভুট্টার খেতে কাজ করার জন্য। বাড়িতে এক স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়ে। মালিকের কাছে খবর এসেছে তারা তিনজনই জ্বরে আক্রান্ত। এই খবর পাওয়ার পর তিনি বাড়ির উদ্দেশ্য বের হয়ে নতুন বাসস্ট্যান্ড এসে দেখেন বাস চলাচল বন্ধ। দুলু মিয়া বলেন, ‘এতটা পথ ইজিবাইকে (অটোরিকশা) ভেঙে ভেঙে যাওয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া ভাড়াও লাগবে অনেক বেশি, তাই বাসের অপেক্ষায় বসে আছি।’
ফরিদপুর শহরের গোয়ালচমটে মহল্লায় মেয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান (৫৮)। বেড়ানো শেষে তিনি মাগুরার উদ্দেশ্যে বাসস্ট্যান্ডে আসেন। তিনি বলেন, ধর্মঘট হবে বলে তাঁর মেয়ে বের হতে মানা করেছিলেন। তিনি পাত্তা না দিয়ে এসে দেখেন সত্যিই বাস বন্ধ। এতোটা পথ টানা ইজিবাইক পাওয়া যাচ্ছে না। এখন গেলেও ভেঙে ভেঙে যেতে হবে।
একটি বাসের সুপারভাইজার শহিদুল মিয়া (৬১) বলেন, ‘এ খেলার কোনো মানে জানি না, মানে বুঝি না। কেন যে বাস বন্ধ করতে হয়, নেতাদের কথায় না চললে বিপদ। কিন্তু আমাদের বিপদ দেখার লোক নেই।’
গত ৭ নভেম্বর ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর চিঠি দিয়ে মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ ত্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের বিষয়ে দাবি জানায় ফরিদপুর বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। চিঠিতে বলা হয়, ১০ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানা না হলে পরদিন সকাল ৬টা থেকে ১২ নভেম্বর রাত ৮টা পর্যন্ত (৩৮ ঘণ্টা) সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হবে। বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক গোলাম নাসির গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দাবির বিষয়ে প্রশাসনের কাছ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া না পাওয়ায় ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
তবে ফরিদপুরে বিএনপির গণসমাবেশের সমন্বয়কারী কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, বাস বন্ধের একটাই উদ্দেশ্য, বিএনপির গণসমাবেশে বাধা দেওয়া। কিন্তু এতে বিএনপির গণসমাবেশে কোনো সমস্যা হবে না। কারণ, মানুষ বাধা পেলেই বেশি বের হয়।
এদিকে ফরিদপুরে বিআরটিসি চলাচলও বন্ধ আছে। বিআরটিসির সহকারী পরিচালক মোজাম্মেল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, শুক্র ও শনিবার ফরিদপুর থেকে সব পথে বিআরটিসির বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। বাস মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদ মহাসড়কে সব ধরনের অবৈধ তিন চাকার যান চলাচল বন্ধের জন্য কাল সকাল ৬টা থেকে ৩৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে। তাঁরাও ওই দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বাস বন্ধ করে দিয়েছেন।