‘মিয়ে সরকারি মেডিকেলে সুযোগ পাইছে, এহন টাকার জুগান হলি পড়বের পারত’
বাবা কৃষিশ্রমিক; মা অন্যের বাড়িতে কাজ করেন। টানাপোড়েনের সংসারের মধ্যেই মেঘলা খাতুনের (১৯) বেড়ে ওঠা। তবে ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখার প্রতি তাঁর প্রচণ্ড আগ্রহ। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছেন; ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে। কিন্তু ভর্তি ও পড়াশোনার খরচ নিয়ে চিন্তিত তাঁর পরিবার। অর্থ জোগাতে মাকে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে শিক্ষক, আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতদের দ্বারে দ্বারে।
সপরিবার মেঘলার বসবাস পাবনা সদরের মৌগ্রাম এলাকায়। বাবার নাম হাশমত মির্জা ও মা চায়না খাতুন। মা ও দুই শিক্ষককে নিয়ে মেঘলা এসেছিলেন ‘প্রথম আলো’-এর পাবনা কার্যালয়ে। সেখানেই তাঁদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।
মেঘলা মা–বাবার একমাত্র সন্তান। ২০২২ সালে স্থানীয় ‘একদন্ত উচ্চবিদ্যালয়’ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ এবং ২০২৪ সালে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এবার মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৩ হাজার ১৬৮তম হয়ে ‘দিনাজপুর মেডিকেল কলেজে’ ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।
মেয়ে মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় খুশি বাবা হাশমত মির্জা। তবে মেয়ের ভর্তি ও পরবর্তী সময়ে পড়াশোনার খরচ নিয়ে বেশ চিন্তিত তিনি। হাশমত জানান, নিজে পড়ালেখা করতে পারেননি। তাই একমাত্র সন্তানকে শিক্ষিত করতে চেয়েছেন। মেয়ে তাঁর আশা পূরণ করতে চলেছে, কিন্তু তিনি এখন মেয়ের জন্য কীভাবে টাকা জোগাড় করবেন—তা বুঝে উঠতে পারছেন না।
হাশমত মির্জা ভাষায়, ‘আমি দিন আনি দিন খাই। মিয়ের মা মানুষির বাড়িত কাম করে মিয়েডার পড়া চলাইছে। মিয়েও স্বপ্ন দেখছে ডাক্তার হবি। আল্লাহ স্বপ্ন কবুল করছে। মিয়ে সরকারি মেডিকেলে পড়ার সযোগ পাইছে। এহন টাকার জুগান হলি মিয়েডা পড়বের পারত।’
মেঘলার মা চায়না খাতুন বলেন, মেঘলা মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পাবার পর থেকেই তাঁরা টাকা জোগাড়ের চেষ্টা করছেন। মেয়েকে নিয়ে আত্মীয়স্বজন অনেকের কাছে গেছেন। কিন্তু টাকার জোগাড় করতে পারেননি। তাই খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন।
মেঘলাদের প্রতিবেশী ও মৌগ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শফিকুল ইসলাম জানান, ‘মেঘলা ছোটবেলা থেকেই খুব মেধাবী। পড়াশোনার বিষয়ে তাঁর খুব আগ্রহ। কষ্ট করেই মেয়েটির মা–বাবা এত দিন পড়ার খরচ চালিয়েছেন। এখন ওর একটু অর্থনৈতিক সহযোগিতার প্রয়োজন। সহযোগিতা পেলে মেয়েটি অনেক ভালো করবে বলেই সবাই প্রত্যাশা করে।’
পরিবারের অসচ্ছলতা ও নিজের পড়ালেখার খরচ নিয়ে মা–বাবার সঙ্গে নিজেও চিন্তার মধ্যে আছেন মেঘলা খাতুন। তিনি জানান, ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল। শিক্ষকদের সহযোগিতায় এ পর্যন্ত এগিয়েছেন; তবে এখন আর পারছেন না। তাঁদের পরিবারের কাছে বিক্রি করে অর্থ জোগাড় করার মতোও কিছু নেই। তাই কীভাবে টাকা জোগাড় হবে—তা নিয়ে চিন্তায় আছেন।
কথাগুলোর একপর্যায়ে মেঘলা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘মা–বাবা দুজনই খুব কষ্ট করেন। পড়ালেখার জন্য উৎসাহ দেন। কিন্তু তাঁরা এখন অসহায়। ভর্তির টাকা জোগাড় করতে দুজনই দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। তাই আমার মেডিকেলে ভর্তি হওয়া হবে কিনা বুঝতে পারছি না।’