শামীম ওসমানের সঙ্গে তর্ক: নোয়াখালীতে ছাত্রদল নেতার বাড়িতে হামলার পর আতঙ্কে পরিবার

যুক্তরাষ্ট্রে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকে হেনস্তার চেষ্টার অভিযোগে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে ছাত্রদলের সাবেক নেতা বাদল মির্জার গ্রামের বাড়িতে ছাত্রলীগের ককটেল হামলা। গত শনিবার সকালে আমকি গ্রামে
ছবি: সংগৃহীত

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায় ছাত্রলীগের ককটেল হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনার দুই দিন পরও বাড়িতে ফেরেননি সাবেক ছাত্রদল নেতা প্রবাসী বাদল মির্জার পরিবারের সদস্যরা। গত শনিবারের এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত থানায় কোনো অভিযোগও করা হয়নি।

বাড়িতে ছাত্রলীগের হামলার ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করার বিষয়ে জানতে বাদল মির্জার বড় ভাই হাসানুর জামানের মুঠোফোন ও হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

গত বুধবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের লিটল বাংলাদেশ (৭৩ স্ট্রিট) এলাকায় নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের সঙ্গে বাদল মির্জার তর্কের ঘটনা ঘটে। এর জের ধরে সোনাইমুড়ি উপজেলায় বাদল মির্জার বাড়িতে হামলা চালান ছাত্রলীগের নেতা–কর্মীরা। হামলার ঘটনাটি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা নিজেদের মুঠোফোন থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লাইভ প্রচার করেন।

আরও পড়ুন

বাদল মির্জার প্রতিবেশী এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সংঘঠিত তুচ্ছ ঘটনাকে পুঁজি করে গ্রামের বাড়িতে হামলা এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে। সে কারণে বাদলের পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁরা বাড়িতে ফিরতে সাহস পাচ্ছেন না। বাড়ির লোকজন কিংবা প্রতিবেশীদের সঙ্গেও যোগাযোগ করছেন না। তাঁরা কোথায় আছেন, তা–ও কেউ জানেন না।

ঘটনার নিন্দা জানিয়ে জয়াগ ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মাহবুব আলম বলেন, ঘটনার পর তিনি ওই বাড়িতে ঘুরে এসেছেন। হামলার কারণে বাদলের পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তাঁরা আইনের আশ্রয় নিতেও সাহস পাচ্ছেন না। তবে দলীয়ভাবে এখনো এই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।
জয়াগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান শওকত আকবর বলেন, ঘটনার সময় এলাকায় ছিলেন না তিনি। বাদল মির্জা সম্পর্কে তাঁর ভাতিজা। প্রায় ১২ বছর আগে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় পাড়ি জমান। সেখান থেকে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে বাদল সবার ছোট। বাড়িতে তাঁর বাবা মা ও দুই ভাই থাকেন। তাঁরা কেউই এখন বাড়িতে নেই। কারও সঙ্গে যোগাযোগও হয়নি।

সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি (কেন্দ্রঘোষিত কমিটি) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘শামীম ওসমান সারা বাংলাদেশের গর্ব। তাঁকে অপমান করা মানে আমাদের সবাইকে অপমান করা। বাদল মির্জা আওয়ামী লীগ ও আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটূক্তি করেছেন। ছাত্রলীগের একজন কর্মী হিসেবে আমরা বিষয়টি মেনে নিতে পারিনি। তাই তাঁর ঘরের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করেছি। এ সময় উত্তেজিত নেতা–কর্মীরা তাঁর বসতঘরে হামলা ও ভাঙচুর করেন।’

সোনাইমুড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক প্রথম আলোকে বলেন, শনিবার বিকেলে প্রবাসী ছাত্রদল নেতা বাদল মির্জার বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। সে সময় বাড়িতে বাদলের পরিবারের কাউকে পাওয়া যায়নি। গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো অভিযোগও আসেনি। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের জ্যাকসন হাইটসের লিটল বাংলাদেশ (৭৩ স্ট্রিট) এলাকায় যান শামীম ওসমান। তাঁকে দেখামাত্র রাস্তার বিপরীতে থাকা নিউইয়র্ক মহানগর বিএনপির নেতা রাব্বী, সোনাইমুড়ী উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা বাদল মির্জাসহ কয়েকজন ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলে স্লোগান দেন। পরে ওই ঘটনার একটি ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।