ভূমিকম্পে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন তিন হলে ফাটল, নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ
ভূমিকম্পে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত তিনটি হলের বেশ কিছু স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভূমিকম্প অনুভূত হয়। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এর মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭ এবং উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর মাধবদী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নবনির্মিত শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের নবম তলায় ফ্লোর ফেটে গেছে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছয়তলার বি-ব্লকের ওয়াশরুমে ও সাততলার ফ্লোরে ফাটল দেখা গেছে। নবনির্মিত ফজিলাতুন্নেছা হলেও ফাটল সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১০ তলাবিশিষ্ট ছয়টি আবাসিক হলের নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০২৩ সালের নভেম্বরে। এর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং ফজিলাতুন্নেছা হলে আজকের ভূমিকম্পে ফাটল দেখা গেছে। এসব ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হল ছাত্র সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) সিফাতউল্লাহ বলেন, ‘নতুন হলগুলো নির্মাণের পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ ছিল। বৃষ্টি হলেই রুমে পানি ঢুকে যায়, ঝড় হলে টাইলস খুলে পড়ে। আজ আবার ভূমিকম্পে ফাটল ধরেছে। পুরোনো হলে এমন সমস্যা না থাকলেও নতুন হলে ফাটল ধরেছে। আমরা ধারণা করছি, নির্মাণকাজে অনিয়ম ও দুর্নীতির ফলেই এমন হয়েছে। আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত দেবো।’
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদের সহসভাপতি (ভিপি) রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হলের কাজ শেষ হওয়ার দেড় বছর পার না হতেই বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম দৃশ্যমান। ভূমিকম্পে ক্যাম্পাসের পুরোনো হলগুলোতে সমস্যা না হলেও নতুন হলে সমস্যা হয়েছে। প্রকল্প অফিসের সীমাহীন দুর্নীতি এবং প্রশাসনের সদিচ্ছার অভাবে এগুলো যে হয়েছে, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।’
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক খো. লুৎফুল এলাহী বলেন, ‘হলের ৯ তলার ফ্লোরে প্লাস্টারে ফাটল ধরেছে। হয়তো নির্মাণকাজে যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে, সেগুলোর মানসম্মত ছিল না। ফাটলের ভিডিও প্রভোস্ট কমিটির গ্রুপে পাঠিয়েছি।’
প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম রাশিদুল আলম বলেন, ‘ভূমিকম্পে কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। বিভিন্ন হল পরিদর্শন করে কোথাও ফাটল দেখা দিলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসকে অনুরোধ করেছি।’
অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘ভূমিকম্প ফ্যাক্টরের মাত্রা বিবেচনায় নিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। বিভিন্ন হলে যে ফাটল ধরেছে, সেগুলো আমাদের নজরে এসেছে। এগুলো নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই, এমন দুর্যোগ হলে এমন ফাটল ধরতে পারে। তবে যদি কলাম বা বিমে ফাটল ধরত, তাহলে সমস্যা হতো। এখানে তেমন কিছু ঘটেনি।’