নরসিংদীতে আ.লীগ নেতা হত্যা, কাতার থেকে আসামিকে ফিরিয়ে এনে গ্রেপ্তার

নরসিংদীতে আওয়ামী লীগ নেতা মাহাবুবুল হাসান হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি রাসেল মাহমুদকে কাতার বিমানবন্দর থেকে ফিরিয়ে এনে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশছবি: প্রথম আলো

নরসিংদীতে আওয়ামী লীগের এক নেতাকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামিকে কাতার থেকে ফিরিয়ে এনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুলিশ বিমানবন্দরে পৌঁছানোর আগে ওই আসামি কাতারের বিমানে চেপে বসেছিলেন। পরে কাতার ও বাংলাদেশের ইমিগ্রেশন পুলিশের সাহায্যে ফিরতি ফ্লাইটে তাঁকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নরসিংদীর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এসব তথ্য জানান। গ্রেপ্তার ওই আসামির নাম রাসেল মাহমুদ (৪৫)। তিনি জেলার মাধবদী উপজেলার পৌলানপুর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে।

রাসেল মাহমুদ নরসিংদী সদর উপজেলার মেহেরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবুল হাসান (৪০) হত্যা মামলার ২ নম্বর আসামি। গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে মেহেরপাড়া ইউপির ভগীরথপুর এলাকায় মাহবুবুলকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত মাহাবুবুল মেহেরপাড়া ইউপির ভগীরথপুর এলাকার মো. ইমাম উদ্দীনের ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার জানান, আসামি রাসেল মাহমুদ গত বৃহস্পতিবার ভোর চারটায় কাতার এয়ারলাইনসের একটি বিমানে চেপে কাতার হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে রওনা হন। খবর পেয়ে মাধবদী থানা–পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা যৌথভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যায়। কিন্তু পুলিশের পৌঁছানোর আগে রাসেলকে বহনকারী বিমান রানওয়ে ছেড়ে যায়। তাঁকে গ্রেপ্তার করতে ঢাকার ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাইলে তাঁরা কাতার ইমিগ্রেশন পুলিশকে বিষয়টি জানান। রাসেল মাহমুদ কাতার বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাঁকে আটক করে কাতারের ইমিগ্রেশন পুলিশ। ১২ ঘণ্টা পর ফিরতি ফ্লাইটে তাঁকে দেশে ফেরত পাঠালে গতকাল শুক্রবার ভোরে ঢাকার ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁকে নরসিংদী জেলা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এরই মধ্যে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাপাতি ও জড়িত আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

এক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য মাহাবুবুল হাসানকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। কেউ অর্থ দিয়ে, কেউ পরিকল্পনা করে, কেউ আবার সরাসরি হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন। যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ ছাড় পাবেন না। গ্রেপ্তার রাসেল মাহমুদই হত্যাকাণ্ডের মাষ্টারমাইন্ড। সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়ে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

মাহাবুবুল হাসান
ছবি: সংগৃহীত

হত্যাকাণ্ডের ৪২ ঘণ্টা পর গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নিহতের ছোট ভাই হাফিজ উল্লাহ বাদী হয়ে ২২ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে মামলা করেন। এ ঘটনায় রাসেলসহ মোট আটজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। আসামিদের মধ্যে ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার অমিত ও সদস্য আতাউর ভূঁইয়া এখনো গ্রেপ্তার হননি।

গ্রেপ্তার অন্য আসামিরা হলেন মাধবদীর পৌলানপুর এলাকার হাবিবুর রহমান (৬৫), হিমেল মিয়া (৪৩), জুয়েল মিয়া (৩৯), নবেল মিয়া (২৮), টাঙ্গাইলের গোপালপুরের খানপাড়া এলাকার মো. রাব্বী (১৯), কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীর ভরতের ছড়া এলাকার মো. মিঠু (৩৫) ও মাধবদীর কবিরাজপুর এলাকার লিপু মিয়া (৪৫)। তাঁদের মধ্যে রাসেলের বিরুদ্ধে দুটি, হিমেলের বিরুদ্ধে তিনটি ও জুয়েলের বিরুদ্ধে চারটি মামলা আছে।

আরও পড়ুন

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা গেছে, অন্যান্য দিনের মতো গত মঙ্গলবার বেশ রাত পর্যন্ত কর্মীদের নিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ছিলেন মাহাবুবুল হাসান। কার্যালয় থেকে বেরিয়ে মুঠোফোনে কথা বলতে বলতে কর্মীদের সঙ্গে হেঁটে তিনি বাড়িতে যাচ্ছিলেন। রাত পৌনে ১২টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান আজাহার অমিতের ব্যক্তিগত কার্যালয়-সংলগ্ন টেক্সটাইল কারখানার সামনে হামলার ঘটনা ঘটে। কারখানার বিপরীতে গলির মুখে দাঁড় করানো একটি বালুভর্তি ট্রাকের আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন আসামিরা। ট্রাকটি অতিক্রমের সময় হামলাকারীরা বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ করেন এবং গুলি ছোড়েন। হামলাকারীদের একজন ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাহাবুবুলের কান–ঘাড় বরাবর ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেন। মাহাবুবুলকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সাঈদ ও ফরহাদ নামের তাঁর দুজন কর্মী। পরে তাঁদের সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক মাহাবুবুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন