প্রেমের পর বিয়ের প্রস্তাবে না, ক্ষোভে সহকর্মীকে কুপিয়ে হত্যা

নারী হোটেল শ্রমিককে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার তরিকুল ইসলাম (২৮)। রোববার দিনাজপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ে
ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুর শহরে নারী হোটেল শ্রমিক জয়া বর্মণকে (৩০) কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় তরিকুল ইসলাম ওরফে চান্দু নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় গতকাল শনিবার ভোররাতে জেলার খানসামা উপজেলার পাকেরহাট এলাকার একটি মিষ্টির দোকান থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তরিকুলকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিকে পুলিশ দাবি করেছে, নিহত জয়া বর্মণ ও গ্রেপ্তার তরিকুল ইসলাম একই হোটেলে কাজ করতেন। ছয় মাস আগে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিন্তু তরিকুলের বিয়ের প্রস্তাবে জয়া না করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে জয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তরিকুল।

আরও পড়ুন

আজ রোববার দুপুরে জয়া বর্মণ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মাসুম এ দাবি করেন। এ সময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শেখ মো. জিন্নাহ আল মামুন, কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ হোসেন, উপপরিদর্শক (এসআই) শামীম হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় দিনাজপুর শহরের মির্জাপুর বাস টার্মিনাল এলাকায় দুর্বৃত্তের হাতে নিহত হন জয়া। স্বামী-সন্তান নিয়ে তিনি শহরের ফকিরপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী স্বপন রায় বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

ওই মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন তরিকুল। তিনি সদর উপজেলার মুরাদপুর দামপুকুর এলাকার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে। ব্যক্তিজীবনে তিনি বিবাহিত। কিন্তু পাঁচ বছর আগে স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, গ্রেপ্তার তরিকুল ইসলাম ও হোটেল শ্রমিক জয়া বর্মণ উভয়ে শহরের মির্জাপুর বাস টার্মিনাল এলাকার সাউদিয়া নামের একটি খাবারের হোটেলে কাজ করতেন। তরিকুল কারিগর ছিলেন। জয়া বর্মণ ধোয়ামোছার কাজ করতেন। তখন উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তরিকুল দৈনিক ২৫০ টাকা হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করতেন। বেতনের অর্ধেক টাকা জয়া বর্মণের কাছে জমা রাখতেন। কয়েক দিন আগে থেকে জয়াকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিতে থাকেন তরিকুল। কিন্তু জয়া রাজি হচ্ছিলেন না। একটা সময় ক্ষুব্ধ হয়ে জয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তরিকুল।

আবদুল্লাহ আল মাসুম দাবি করেন, ঘটনার দিন সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে শহরের মহারাজার মোড় এলাকায় একটি কামারের দোকান থেকে একটি দা কেনেন তরিকুল। পরে হোটেলের কাজ শেষ করে জয়ার বাড়িতে ফেরার রাস্তায় পথ রোধ করেন। কোনো কথা না বলেই তিনি দা দিয়ে জয়াকে উপর্যুপরি কুপিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এরপর মুঠোফোন বন্ধ করে আত্মগোপনে চলে যান তিনি। তথ্যপ্রযুক্তি ও স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল ভোরে তাঁকে আটক করে পুলিশ।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তরিকুল ইসলাম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন। আজ বিকেলে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হবে। পুলিশ জানায়, আসামি তরিকুলের নামে কোতোয়ালি থানায় আগের দুটি মারামারির মামলা আছে।