বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে দুদকের অভিযান

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে আজ মঙ্গলবার অভিযান চালান দুর্নীতি দমন কমিশনের কর্মকর্তারা। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষের সঙ্গে তাঁদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে মঙ্গলবার সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল অভিযান চালিয়েছে। এ সময় দুদকের কর্মকর্তারা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে চিকিৎসকদের বায়োমেট্রিক হাজিরা দেখতে চাইলে তা দিতে অস্বীকৃতি জানান অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহিন। এ নিয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে দুদক কর্মকর্তাদের বাগ্‌বিতণ্ডা হয়েছে।

অধ্যক্ষের সঙ্গে অসদাচরণের প্রতিবাদে বুধবার বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন চিকিৎসকেরা।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, মেডিকেল কলেজে কর্মরত শিক্ষকেরা হাসপাতালে ও কলেজে নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখায় ব্যস্ত থাকেন এমন অভিযোগে এই অভিযান চালানো হয়েছে।

দুদকের একটি সূত্র জানায়, মেডিকেল কলেজে কর্মরত শিক্ষকেরা হাসপাতালে ও কলেজে নিয়মিত দায়িত্ব পালন না করে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখায় ব্যস্ত থাকেন এমন অভিযোগে এই অভিযান চালানো হয়েছে। তবে কলেজ কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

কলেজ ও হাসপাতাল সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দুদকের বরিশাল কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রাজ কুমার সাহার নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি দল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অভিযান চালায়। এ সময় দুদকের দলটি কলেজ অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহিনের কক্ষে গেলে তাঁকে তাঁর কার্যালয়ে পাননি। কিছুক্ষণ পর কলেজ অধ্যক্ষ তাঁর কার্যালয়ে আসেন। এ সময় দুদকের কর্মকর্তারা কলেজ অধ্যক্ষের কাছে শিক্ষকদের এক সপ্তাহের বায়োমেট্রিক হাজিরার বিবরণ দেখতে চান। কিন্তু তা দিতে অস্বীকার করেন কলেজ অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহিন। এ নিয়ে অধ্যক্ষ ও দুদকের কর্মকর্তাদের মধ্যে বচসা হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে দুদকের কর্মকর্তারা ফিরে যান।

আমি যত দূর জানতে পেরেছি, তাদের (দুদক) কেউ একজন আমাদের কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছেন। এ জন্য তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে এই অভিযানে এসেছেন।
মনিরুজ্জামান শাহিন, অধ্যক্ষ, বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ

এ বিষয়ে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুজ্জামান শাহিন বলেন, ‘আমি যত দূর জানতে পেরেছি, তাদের (দুদক) কেউ একজন আমাদের কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের চেম্বারে গিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেছেন। এ জন্য তাঁরা ক্ষুব্ধ হয়ে এই অভিযানে এসেছেন।’

অধ্যক্ষ আরও বলেন, ‘তাঁরা এসে আমার কাছে শিক্ষকদের বায়োমেট্রিক হাজিরার তালিকা চান। আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে বলেছেন, “দুদকের দল যদি আগেভাগে নোটিশ করে না আসে, তাহলে সে হঠাৎ করে এসে কাগজপত্র চাইতে পারে না।” এগুলো দিইনি বলে তাঁরা আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন।’

সরকারি দায়িত্বে অবহেলা করে ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসকেরা বেশি সময় দেন—দুদকের কর্মকর্তাদের এমন অভিযোগের বিষয়ে অধ্যক্ষ বলেন, সরকার চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বার করা যাবে না, এমন কোনো নির্দেশনা জারি করেনি। যদি থাকে তাহলে চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগত চেম্বার করবেন না।

এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার বেলা দুইটায় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকেরা করণীয় নির্ধারণে এক জরুরি সভার আয়োজন করেন। সভায় দুদকের এমন আচরণে ক্ষোভ প্রকাশ করে নিন্দা জানানো হয়। ওই সভায় আগামীকাল বুধবার এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বরিশালের বিভাগীয় কমিশনারের কাছে একটি স্মারকলিপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের কোনো কর্মকর্তা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে চাননি।

এ বিষয়ে দুদকের সমন্বিত বরিশাল জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক দেবব্রত মণ্ডল বলেছেন, তাঁরা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে অভিযান চালানোর পর এ বিষয় তাঁদের পর্যবেক্ষণ দুদকের প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। শিগগিরই এ বিষয়ে প্রধান কার্যালয় থেকে বিস্তারিত জানানো হবে।