উখিয়া আশ্রয়শিবিরে গুলিতে দুই রোহিঙ্গা নেতা নিহত

গোলাগুলি
প্রতীকী ছবি

কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৫) সন্ত্রাসীদের গুলিতে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনা কমিটির দুজন হেড মাঝি (রোহিঙ্গা নেতা) নিহত হয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ক্যাম্প-১৫-এর সি-৯ ব্লকের পাহাড়ে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত দুজন হলেন এই আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দা আবদুর রহিমের ছেলে আবু তালেব (৫০) ও ইমাম হোসেনের ছেলে সৈয়দ হোসেন (৪০)। এ ঘটনার পর থেকে ওই আশ্রয়শিবিরে আতঙ্ক বিরাজ করেছে।
আশ্রয়শিবিরের বাসিন্দাদের দাবি, আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসা নিয়ে বিরোধের জেরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্যরা গুলি করে দুই রোহিঙ্গা মাঝিকে হত্যা করেছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গারা বলেন, গতকাল রাতে পবিত্র আশুরার ইবাদত শেষে কয়েক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের পাহাড়ি বসতির একটি শেডের সামনে আড্ডা দিচ্ছিলেন। এ সময় অস্ত্রধারী কয়েক সন্ত্রাসী সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে আবু তালেব ও সৈয়দ হোসেন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা গুলিবিদ্ধ দুই রোহিঙ্গা মাঝিকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় জামতলী আশ্রয়শিবিরের এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈয়দ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে আবু তালেবের অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে তাঁকে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে আবু তালেব মারা যান।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, আজ বুধবার ভোররাতে নিহত দুই রোহিঙ্গা নেতার সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছে পুলিশ। দুজনের শরীরে একাধিক গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। লাশ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে।

ওই আশ্রয়শিবিরের একাধিক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক ব্যবসা পরিচালনা নিয়ে মাঝিদের সঙ্গে আরসার সদস্যদের বিরোধ চলে আসছিল। আরসার সদস্যদের তৎপরতা সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্য দেওয়ায় মাঝিদের প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হচ্ছিল। এর আগে গত সোমবার রাতে উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮) আয়াত উল্লাহ (২৮) গুলিবিদ্ধ হন। তিনি রাত্রিকালীন ক্যাম্প পাহারার স্বেচ্ছাসেবী দলের (লাঠি-বাঁশি বাহিনী) সদস্য। আয়াত উল্লাহ বর্তমানে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

রোহিঙ্গা নেতা কামাল উদ্দিন বলেন, মাঝিদের তৎপরতার কারণে আরসার বেশ কয়েক সদস্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মাদক, অস্ত্রসহ ধরা পড়েছেন। রাত্রিকালীন পাহারা বসানোর কারণে আরসার সদস্যরা আশ্রয়শিবিরে ঢুকতে না পেরে বেকায়দায় আছেন। এতে মাদক ব্যবসা পরিচালনা ও রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করতে না পেরে মাঝিদের সঙ্গে আরসার সদস্যদের বিরোধ শুরু হয়।