নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার ১৩৫ মাস উপলক্ষে মোমশিখা প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে।
আজ শনিবার সন্ধ্যায় নগরের চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট এ কর্মসূচি আয়োজন করে।
এ কর্মসূচিতে নিহত ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, গণতন্ত্রহীন সমাজে দুর্বৃত্ত শক্তিই হয় ‘সর্বশক্তিমান’। সেখানে সুশাসন থাকে না, সেখানে বিচারব্যবস্থা স্বাধীন হতে পারে না। ত্বকী হত্যার ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও তৈরি করে রাখা অভিযোগপত্রটি আজও আদালতে পেশ করা হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিচারব্যবস্থাকে পঙ্গু করার এটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। তিনি বলেন, সংবিধান ও রাষ্ট্রের চোখে সব নাগরিক সমান বললেও বাস্তবতা আজকে ভিন্ন।
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘দেশে একদিকে বেনজীর-আজিজ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিরন্ন মানুষের সংখ্যা। প্রতিটি জেলায় এমন অসংখ্য বেনজীর-আজিজ গড়ে উঠেছে। আমরা এ বৈষম্যমূলক, গণবিরোধী সমাজব্যবস্থার, বিচারব্যবস্থার পরিবর্তন চাই। সংবিধানে উল্লেখিত জনগণের অধিকারগুলোর বাস্তবায়ন চাই। সাগর-রুনী, তনুসহ নারায়ণগঞ্জে সংঘটিত সব হত্যার বিচার চাই। জনবান্ধব সরকার ছাড়া কেবল স্লোগান দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের বাস্তবায়ন করা যাবে না।’
কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা সঞ্চালনা করেন। রফিউর রাব্বি ছাড়াও বক্তব্য দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুবুর রহমান, সদস্যসচিব হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, ন্যাপ জেলা সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাবেক সভাপতি প্রদীপ ঘোষ, সিপিবি জেলা সাধারণ সম্পাদক শিবনাথ চক্রবর্তী, বাসদের জেলা সদস্যসচিব আবু নাঈম, গণসংহতি আন্দোলন জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সংগঠক রাশিদ আক্তার প্রমুখ।
প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে হালিম আজাদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘আপনি ত্বকী হত্যার বিচার করুন। ওসমান পরিবারের পাশে থাকেন আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু আমাদের সন্তান হত্যার বিচার করেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এসবের বিচার করা তো আপনার দায়িত্ব।’
মাহবুবুর রহমান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জের মানুষের জীবনকে দূর্বিষহ করে তুলেছে। তারা সরকার-প্রশাসনের ছত্রছায়ায় সকল অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। ত্বকী হত্যার নির্দেশদাতার বিচার একদিন হবেই।’
২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
৫ মার্চ ২০১৪ তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাঁদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। কিন্তু সে অভিযোগপত্র আজও আদালতে পেশ করা হয়নি। ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচি পালন করে আসছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট।