কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমলেও ভাঙন বেড়েছে
কয়েক দিন থেকে কুড়িগ্রামের সব নদ-নদীর পানি কমলেও ভাঙন বেড়েছে। ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গাধর নদে ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। এসব নদ-নদী অববাহিকায় পাঁচটি প্রাথমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দুটি বাজার ও শতাধিক বসতবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও উপজেলা প্রশাসনকে অবগত করা হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। ইতিমধ্যে নদী তীরবর্তী এলাকার কয়েক একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি বিলীন হতে শুরু করেছে।
আজ শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ পাউবোর দেওয়া তথ্যমতে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে, ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে, দুধকুমার নদের পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে এবং তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে কমতে শুরু করেছে। গত তিন দিন থেকে এই পানি কমা অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু পানি কমলেও এসব নদ-নদীর অববাহিকার অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল ও নদ-নদীর তীরবর্তী ২০টির বেশি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিন থেকে বৃষ্টি না হওয়ায় উজানের পাহাড়ি ঢলের স্রোত কমে এসে জেলার ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, গঙ্গাধর নদের পানি কমতে শুরু করেছে। এসব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার সময় এবং পানি কমার সময়ে ভাঙন আগ্রাসী আকার ধারণ করে।
সরেজমিনে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মশালের চর, সাহেবের আলগা ইউনিয়নের জাহাজের আলগা, নামাজের চর, দলদলিয়া ইউনিয়নের কর্পুরা বসুনিয়াপাড়া, ঠুটাপাইকর, থেতরাই ইউনিয়নের রামনিয়াশা গ্রাম, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট, রাজারহাট উপজেলার চর গতিয়াশাম, কালিহাট বাজার, কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের প্রথম আলো চর, চর রাউলিয়া এবং নাগেশ্বরী উপজেলার নুনখাওয়া ইউনিয়নের ব্যাপারীর চর, বল্লভেরখাস ইউনিয়নের রামদত্ত, মাঝিপাড়া, চিলমারী উপজেলার নয়ারহাট ইউনিয়নের নয়ারহাট গ্রাম, থানাহাট ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামে নদ-নদী ভাঙনের তাণ্ডব দেখা গেছে।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লাহাট গ্রামের বাসিন্দা সোবাহান আলী বলেন, গত এক মাসে ব্রহ্মপুত্রর ভাঙনে উত্তর বালাডোবা (মুসল্লিপাড়া), সরকার পাড়া, রসুলপুর গ্রামের প্রায় ৭০টি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে। ঈদের দুই দিন আগে ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধি পেলে ভাঙন শুরু হয়। সে সময় পাউবো থেকে অস্থায়ী ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এতে ভাঙন কিছুটা কমে এসেছে। তবে আবার পানি বৃদ্ধির আগে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে বেগম নুর নাহার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মোল্লারহাট বাজারসহ ওই অঞ্চলের দুই শতাধিক বসতবাড়ি বিলীন হয়ে যাবে।
উলিপুরের দলদলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. লিয়াকত আলী সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিস্তা নদীর আগ্রাসী ভাঙনের কবলে পড়ে আমার ইউনিয়নের কর্পুরা বসুনিয়া পাড়া, অর্জুনা, ঠুটাপাইকর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন রোধে ইউএনও ও পাউবোকে অবগত করা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। বর্তমানে তিস্তা নদীর পানি কমছে। এই সময়ে ভাঙন ঠেকানো না গেলে ঠুটাপাইকর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠুটাপাইকর বাজার, রাজনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সোলায়মানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ওই এলাকার কয়েক শ বসতবাড়ি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। ইতিমধ্যে কর্পুরা বসুনিয়া পাড়ার কয়েকটি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে এবং কয়েক একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে।’
এ ব্যাপারে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কয়েক দিন থেকে উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টির না হওয়ায় ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গাধর নদের পানি হ্রাস পাচ্ছে। কুড়িগ্রামে ২০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকার গুরুত্ব বিবেচনায় রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের চর গতিয়াশাম, কালিরহাট, উলিপুর সাহেবের আলগা ইউনিয়নের নামাজেরচর, বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লারহাট, চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের পুটিমারীতে প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার এলাকায় বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।