ফখরুলের অন্তরে জ্বালা, জ্বালারে...জ্বালা: ওবায়দুল কাদের

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ওবায়দুল কাদের। সোমবার দুপুরে মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে
ছবি: প্রথম আলো।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উদ্দেশে বলেছেন, ‘ফখরুলের অন্তরে জ্বালা, জ্বালারে...জ্বালা। নোয়াখালী নাকি বিএনপির ঘাঁটি ছিল, আছে সেই ঘাঁটি? চারদিকে উন্নয়ন, শেখ হাসিনার মমতার হাত, উন্নয়নের হাত। বঙ্গবন্ধু টানেল প্রস্তুত। ঢাকা মেট্রোরেল প্রস্তুত। ফখরুলের বড় জ্বালা।’ আজ সোমবার দুপুরে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে মাইজদীর শহীদ ভুলু স্টেডিয়ামে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুন

ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ঢাকা দখল করবেন ফখরুল সাহেব। আমি বলতে চাই, আমাদের নেতা-কর্মীরা মহানগর, পাড়া-মহল্লায়, জেলা, উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড গ্রাম সব জায়গায় সতর্ক পাহারায় থাকবে। বিএনপি বিআরটিসি গাড়ি পুড়িয়েছে, ঢাকায় ও সিলেটে রাতের অন্ধকারে শেখ হাসিনার ভিত্তিপ্রস্তর ভেঙে দিয়েছে। বিআরটিসির গাড়ি মধ্যরাতে পুড়িয়ে দিয়েছে। তারা লাঠি নিয়ে আসবে। পার্টি অফিসে সমাবেশ করতে চায় তারা। বিশাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ফখরুল বলে খাঁচা।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘২০ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। আল্লাহ তাঁকে বাঁচিয়েছে। আল্লাহর রহমত তিনি আজও বেঁচে আছেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ রকম একটা ভালো মানুষ বঙ্গবন্ধুর পর আমরা আর দেখিনি। এমন সৎ, এমন পরিশ্রমী নেতা আমরা আর একজনও দেখিনি।’

শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কোনো সরকার শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, শেখ হাসিনাই ২০০১ সালে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছেন। তিনি ছাড়া আর কেউ শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেননি।

আরও পড়ুন

সম্মেলনে উপস্থিত দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আবেগ পরিহার করতে হবে। আমাদেরও অনেক আবেগ ছিল। রাজনীতি আবেগ দিয়ে চলে না। বাস্তবতা বড়ই কঠিন। সবাইকে অনুরোধ করব, দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলুন। যাঁরা রাজনীতি করেন, লেগে থাকেন। লেগে থাকতে হবে। আপনারা প্রস্তুত হন। খেলা হবে, এই ডিসেম্বরে খেলা হবে। আগামী নির্বাচনে খেলা হবে, আন্দোলনে খেলা হবে, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে খেলা হবে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে, দুঃশাসনের বিরুদ্ধে খেলা হবে।’

নিজ জেলায় দলের মধ্যে সংকটের কথা বলতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘এখানে অনেক সংকট ছিল, রাজনীতির স্বার্থে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। কোম্পানীগঞ্জে আমার ভাই ক্ষমা চেয়েছে, আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। আমি এখানে বিরোধ রাখতে চাই না। কলহ রাখতে চাই না। আমি কোলাহলমুক্ত আওয়ামী লীগ চাই। ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই আমাদের অস্তিত্বের জন্য। আমাকে ভুল বুঝবেন না। আমি কারও অন্ধ সমর্থক নই।’

জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ভেঙে দিয়ে সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীকে বাদ দেওয়ার প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে মাঝখানে যে ব্যবস্থাটা নেওয়া হয়েছে, নেত্রী আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “কী করব?” আমি বলেছি, আপনি আমার অভিভাবক। আপনি যেটা বলবেন স্বপনকে (সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ) বলেন। স্বপন আছে। আমি নোয়াখালীর বিষয়ে একটু কম মাথা ঘামাই। এখানে স্বপন একটা সাময়িক কাঠামো (আহ্বায়ক কমিটি) তৈরি করে দিয়েছে। আমি চাইনি আমার জেলায় এমন কিছু হোক। তারপরও পরিস্থিতি আমাকে সেদিকে নিয়ে গেছে। কেউ আমাকে ভুল বুঝবেন না।’

আরও পড়ুন

নোয়াখালী শহরকে মায়াবী উল্লেখ করে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমার কলেজজীবন কেটেছে এই শহরে। এই শহরে মাইজদী বাজারের ওই পাশে বাঁশের বেড়া, টিনের চালের কলেজ হোস্টেলের ১ নম্বর রুমে আমি আড়াই বছর ছিলাম। এই শহরে কত দিন আইয়ুব খানের ছাত্রসংগঠন নির্যাতন করেছে। নোয়াখালী কলেজের নারকেল তলায় মিটিং ভেঙে দিয়েছে। আমার গায়েও লাঠির আঘাত লেগেছে। তখন আমি কলেজ ছাত্রলীগের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলাম।’

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সরকার যেখানে জনসভা করতে দিয়েছে, সেখানেই করতে হবে। না করতে পারলে করবে না। বিএনপি–জামায়াতের অপতৎপরতাকে রুখে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতা-কর্মী আছেন। ২০১৩, ’১৪ ও ’১৫ সালের মতো এই বিএনপি-জামায়াতের অশুভ তৎপরতাকে রুখে দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী করা হবে।

আরও পড়ুন

নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ এইচ এম খায়রুল আনম চৌধুরীর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তৃতা করেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক বেগম ফরিদুন্নাহার, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক মো. আবদুস সবুর, সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরী, মোরশেদ আলম, মামুনুর রশিদ কিরণ, আয়েশা ফেরদাউস প্রমুখ। জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সহিদ উল্যাহ খানের সঞ্চালনায় সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য দেন আরেক যুগ্ম সম্পাদক শিহাব উদ্দিন।